শুধু হাড়ের কারনে নয়,স্নায়ুর কারনেও হতে পারে কোমড় বা হাঁটুর ব‍্যথা

0
(0)

শুধু হাড়ের কারনে নয়,স্নায়ুর কারনেও হতে পারে কোমড় বা হাঁটুর ব‍্যথা

সবুজবাংলা ডেস্ক। শরীরের মধ্যে যখনই কোমড়ে বা হাঁটুর ব‍্যথা হয় তখনই আমরা ভেবে নিই যে হাড়ের সমস‍্যার কারনে হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে কোমড়ে বা হাঁটুর ব‍্যথা শুধু হাড়ের সমস‍্যার জন্য নয়, স্নায়ুজনিত সমস‍্যা বা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। শিরদাঁড়া, শরীরে বিভিন্ন হাড় ও মাংসপেশি জুড়ে স্নায়ুর বিস্তার। যার মূল উৎস মস্তিষ্ক। অর্থাৎ ব্রেন থেকে স্নায়ুগুলি শিরদাঁড়া জুড়ে নেমে এসে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই শরীরে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নার্ভ শরীরের যেকোনও স্থানে কোনও সমস্যা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে স্নায়ুর বিভিন্ন কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়। যার একটি অন্যতম প্রকাশ ব্যথা। ঘাড় থেকে যে নার্ভগুলি হাতের দিকে বেরিয়ে আসে ও কোমর থেকে যে নার্ভ পায়ের দিকে বেরিয়ে যায় সেগুলি ঘাড়ে বা কোমরে কোনও কারণে ড্যামেজ হলে বা চাপ পড়লে তা থেকে ব্যথার উৎপত্তি হয়।

নার্ভজনিত ব্যথার ধরন

হাড় নাকি নার্ভের সমস্যা থেকে ব্যথা হচ্ছে তা বোঝা শক্ত। অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যথার উৎস ঠিকভাবে নির্ধারিত না হওয়ায় দীর্ঘ সময় ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমে না। কারও না কারও, কখনও না কখনও ঘাড়ে-কোমরে ব্যথা হতেই পারে। সবক্ষেত্রেই যে নার্ভজনিত কারণেই এমন হচ্ছে তা নয়। যদি ওষুধ খেয়ে বা ফিজিওথেরাপি করে ব্যথা কমে যায় তবে তা হাড়জনিত কারণেই হচ্ছে বুঝতে হবে। আর যদি এসব করেও ব্যথা কমতে না চায় বা দুই থেকে চার সপ্তাহের বেশি ব্যথা রয়েছে সেক্ষেত্রে নার্ভজনিত কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে বা বারবার মাথার ব্যথা, হাত অবশ হয়ে যাওয়া, হাঁটতে-চলতে অসুবিধা, ভারসাম্যহীনতা, হাত-পা ঝিনঝিন করা, জ্বালাভাব, হাত-পায়ের পেশির দুর্বলতা অনুভব, চোখে দেখতে অসুবিধা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকলে অবহেলা করা উচিত নয়। এইসব লক্ষণ দেখা দিলে তখন নার্ভে কোনও রকম চাপ পড়ছে কি না বা নার্ভজনিত কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না তা নজর দেওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে নিউরো সার্জন, নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিলে ভাল।

কেন হয়

এই ধরনের ব্যথায় টান ধরে। যদি এমন হয়, ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে যাচ্ছে ও হাত ঝিনঝিন করছে দীর্ঘক্ষণ বা কোমর থেকে শুরু করে ব্যথা পায়ের পিছন দিয়ে গোড়ালি পর্যন্ত যাচ্ছে অথবা ব্যথা এক জায়গায় স্থির না থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সেক্ষেত্রে তা হাড়জনিত কারণে ব্যথা হচ্ছে না তা বলাই যায়। সাধারণত শিরদাঁড়ায় কোনও সমস্যা থেকে নার্ভে চাপ পড়লে তা থেকে এই ধরনের ব্যথা হয়। হতে পারে শিরদাঁড়ার যে ডিস্ক থাকে সেই ডিস্ক হাড়ের চাপে বাইরে বেরিয়ে এলে বা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স হলে তা থেকে নার্ভে চাপ পড়ে ব্যথা শুরু হয়। এছাড়াও মধ্যবয়সি মহিলাদের হাত-পা ঝিনঝিন করার প্রবণতা খুব দেখা যায়। থাইরয়েড, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে তাঁদের এই প্রবণতা বেশি থাকে। মূলত রাতের দিকে এই ঝিনঝিনের শুরু হয়। হাতের মাংসপেশি দুর্বল হতে থাকে, হাতে জোর কমে যেতে থাকে নার্ভজনিত কারণে। এই সমস্যাগুলি রাতের দিকেই বেশি দেখা যায়।

বর্তমানে লাম্বার নিউরোপ্যাথি বা লাম্বার র‌্যাডিকিউলোপ্যাথি (ব্যথা ঘাড়ের দিকে হয়) ও সারভাইক্যাল র‌্যাডিকিউলোপ্যাথিতে (ব্যথা কোমরের দিকে হয়) আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অর্থাৎ শিরদাঁড়ার সমস্যা থেকেই নার্ভ পেনে আক্রান্ত অধিকাংশই।

নার্ভ থেকে যে ব্যথা

মাথা ব্যথা
ঘাড়ে ব্যথা
পিঠ ও কোমরে ব্যথা
হাতে, পায়ে ব্যথা ও জ্বালা
জয়েন্ট পেইনও হতে পারে।
রিস্ক বেশি যখন

পায়ে বা কোমরে এমন ব্যথা যা রাতে ঘুমতে দিচ্ছে না।
রেস্ট নিলেও ব্যথা কমছে না বরং তা বেড়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।
ব্যথার ওষুধে ব্যথা কোনও ভাবেই না কমলে।
কখনও যদি এমন হয় কোমরে বা পায়ে ব্যথা থেকে প্রস্রাব-মলের বেগ ধরে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। বা হাত বা পায়ের জোর কমে যাচ্ছে, ভারসাম্য ঠিক রাখতে অসুবিধা হচ্ছে তখন অবহেলা করলে বিপদ বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে শিরদাঁড়ায় অস্বাভাবিক চাপ পড়তে পারে। শিরদাঁড়ায় টিউমার থেকেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তা ফেলে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

হাড়ের ব্যথা থেকে স্নায়ু বিকল

সাধারণত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থেকে পরবর্তী কালে স্নায়ু বিকল হতে পারে। এছাড়া অ্যাঙ্কালোসিস স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা থেকেও নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ধরনের সমস্যায় হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার প্রভাব শিরদাঁড়াতেও পড়ে। যা থেকেই নার্ভের সমস্যা শুরু হয়। বাত বা আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় দীর্ঘদিন ধরে নিজের মতে বিভিন্ন ওষুধ বা ব্যথার ওষুধ খেয়ে না কমলে সেক্ষেত্রে ব্যথার পিছনে নার্ভ লুকিয়ে কি না সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার।

ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি

রেস্ট নিতে হবে।
ভারী বস্তু না তোলা।
ঝুঁকে কাজ করা চলবে না।
প্রথমে দেখা উচিত ডায়াবেটিস হয়েছে কি না।
নার্ভের ব্যথায় নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, নিয়মিত দুটি টাটকা ফল খেতে হবে।
পারকিনসন ডিজিজ থেকেও ব্যথা হতে পারে। তাই রান্নায় হলুদ ব্যবহার করলে পারকিনসন সমস্যা দূর করে ব্যথার সমস্যা প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
পরিশুদ্ধ জল পান করতে হবে। পানীয়র মাধ্যমে কোনও টক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে তার প্রভাবেও স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.