আগৈলঝাড়ায় রাতের আধারে সিভিল সার্জনের অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার পরিদর্শন জনমনে ক্ষোভ

0
(0)


আগৈলঝাড়ায় রাতের আধারে সিভিল সার্জনের অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার পরিদর্শন জনমনে ক্ষোভ
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
চার মাস আগে আগৈলঝাড়ার অবৈধ ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বন্ধের পত্র দিয়েও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তা বন্ধ না করে রবিবার সন্ধার পরে সেই সকল প্রতিষ্ঠান পদির্শনে এসে ম্যানেজ হয়ে আপ্যায়িত হয়ে পুণরায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের অভিযোগ তুলে দু’টি ডায়গনিস্টিক সেন্টার ও তিনটি ডেল্টাল কেয়ার বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছেন বরিশাল সির্ভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেন। একের পর এক পরিদর্শন করেও ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনী কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ডায়াগনিষ্টিক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২৮জুলাই) সন্ধার পরে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেন উপজেলা সদরের বহুল আলোচিত অবৈধভাবে পরিচালিত দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতাল, ডিজিটাল ডায়গনিষ্টিক সেন্টার, জনসেবা মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার, পপি ডেন্টাল কেয়ার, আঁখি ডেন্টাল কেয়ার, হিউম্যান ডেন্টাল কেয়ার পরিদর্শন করেন। এসময় স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সুকলাল সিকদার ও স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা তার সাথে ছিলেন।
আনাড়ি চিকিৎসা প্রদানে রোগী মৃত্যু ও বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকার পরেও রাতের আধারে চুপিসারে সেই দুঃস্থ মানবতার হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সিভিল সার্জনের আপ্যায়িত হবার কথা জানাজানি হলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানের উৎসুক সাধারণ লোকজন।
সিভিল সার্জনের পরিদর্শনের সময় দুুঃস্থ মানবতার হাসপাতাল অন লাইনে তাদের আবেদনের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন ও অন্যান্য অনিয়ম দেখলেও আইনগত কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেন তাদের নতুন করে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে বলেন। অন্য ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়া এবং দক্ষ জনবল না থাকায় তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। তবে বন্ধের নির্দেশ দেয়া ওই সকল প্রতিষ্ঠানগুলো সোমবার দিনভর খোলা রেখে কাজ করতে দেখা গেছে।
অপচিকিৎসা, প্রসুতির মৃত্যু ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র নির্দেশে চলতি বছর ২ ফেব্রায়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বিপুল চন্দ্র দাস পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগেরকর্মকর্তাদের নিয়ে অপচিকিৎসালয় খ্যাত দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসাপতালে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় প্রয়োজনীয় রেজিস্টার্ড চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স, ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ানসহ প্রয়োজনীয় জনবল কাঠোমো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্র না থাকা সর্বোপরি রোগীদের ভুল ও অপচিকিৎসা প্রদানে প্রসুতি মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনে মানবিকতা বিবেচনা করে তিন মাস সময় দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় জনবল কাঠমো নিয়োগ প্রদানসহ প্রশাসন বেশ কিছু শুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাসপাতাল চালুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশের পাঁচ মাস পরে ২৮জুলাই পরিদর্শনে এসেও বৈধ আবেদনসহ প্রয়োজণীয় কাগজপত্র ও জনবল না পাওয়ার পরেও সেখানে সিভিল সার্জনের আপ্যায়িত হয়ে ফিরে যাওয়ায় জনমনে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের সূত্র মতে, আগৈলঝাড়া সদর ও হাসপাতাল সংলগ্ন এলকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে ২২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের মালিকেরা সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ফলে সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে।

ফাইল ছবি

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ৩ মার্চ পৃথক পৃথক আদেশে আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১৫টি ভুয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন।
সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেনের অবৈধ তালিকায় পত্র পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল পয়সা সেইফ লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, পয়সা আদর্শ জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, উপজেলা সদরের দুস্থঃ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, মোল্লাপাড়া এলাকায় এসজিও ব্রেভ পরিচালিত ব্রেভ প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, বারপাইকা মেটারনিটি প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, বাশাইল লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, উপজেলা সদরের ডিজিটাল প্রাইভেট হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, হাসপাতালের সামনে সন্যামত ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, সিকদার ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, উপজেলা সদরের গ্রামীণ প্যথলজি, বাজার রোডের রকি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, তালুকদার প্যাথলজি। এসকল প্রতিষ্টানের একাধিক অনিয়মের জন্য পৃথকভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনটি করেও পত্র ইস্যু করেছিলেন সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জনের দেয়া পত্রের অনুলিপি সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেয়া হলেও জনগনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের নামে ভুল চিকিৎসা ও ভুল রিপোর্টে প্রদান করে প্রতিনিয়ত প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা ওই সকল অবৈধ ক্লিনিক ও রোগ নির্নয়ের ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে তার দেয়া পত্রের কোন কার্যকারিতায় অজ্ঞাত কারণে আইনী কোন ব্যবস্থা নেননি সিভিল সার্জন বা সাবেক ইউএইচএএফপিও ডা. মনিরুল ইসলাম।

এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্জন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলো পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনের খবর পেয়ে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ও খোলা রেখেও পালিয়ে গিয়েছিল। তাই ওই সকল প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ করতে না পারা, লাইসেন্স না করা, নবায়ন না করা ও তাদের প্রয়োজনীয় কাজগপত্র না থাকায় ওই সময়ে তা বন্ধের জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্টানের মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন
চিঠি চালাচালি আর নামকাওয়াস্তে পরিদর্শনের ছলা কলার ষোল কলা পূর্ণ করে বন্ধের নির্দেশ দেয়া ওই সকল প্রতিষ্ঠানে আবার নতুন করে পরিদর্শনে ! নেমেছেন সিভিল সার্জন। তার এই পরিদর্শন জনগনের স্বস্থ্য সেবায় কি ভূমিকা রাখছে ? এমনটাই এখন সাধারন জনগনের প্রশ্ন।
স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সুকলাল সিকদার বলেন, সিভিল সার্জনের এটা নিয়মিত মাসিক পরিদর্শন। রেজিষ্ট্রেশনের জন্য যারা অনলাইনে আবেদন করেছেন সেগুলো পরিদর্শন তার আওতায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস অবৈধ ডায়গনিষ্টিত সেন্টার বন্ধে চিঠির অনুলিপি প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট না চাওয়ায় তিনি এগিয়ে আসতে পারেন নি।

সিভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেন রবিবার সন্ধ্যার পরে পরিদর্শনের কথা স্বীকার করে বলেন, অন্যান্য স্থানে পরিদর্শন করে কাজ শেষ করায় আগৈলঝাড়ায় যেতে সন্ধ্যা হয়। দুঃস্থ মানবতার হাসপাতাল কর্তৃক কোন রকম ম্যানেজ হবার কথা অস্বীকার করে সেখানে তিনি আপ্যায়িত হন নি । ওই হাসপাতালের কাগজপত্র যথাযথ না থাকায় তাদের আবার অন লাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে জানিয়ে ডা. মানোয়ার আরও বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্টানগুলোর অনেকের কাগজপত্র, দক্ষ জনবল ও সুপরিসর জায়গা না থাকায় এগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তারা শর্তগুলো পুরণ করলে প্রতিষ্ঠান আবার চালু হবে। অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে তিনি মঙ্গলবারই চিঠি করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুলিপি প্রেরণ করবেন। তারা অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া না হলে কেন তারা ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার ম্যাজিষ্ট্রেট চাওয়ার ব্যবস্থা তিনি করবেন বরেও জানান।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.