আল্লাহর কোন সৃষ্টি সবচেয়ে শক্তিশালী
আল্লাহর কোন সৃষ্টি সবচেয়ে শক্তিশালী
আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র—সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাঁর একেকটি ক্ষুদ্র সৃষ্টিও মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তিনি কত বড়, কত মহান ও কতটা ক্ষমতাধর। সাধারণত মানুষ পিঁপড়াকে অনেক ছোট প্রাণী হিসেবে জানে। কিন্তু এই ছোট্ট একটি পিঁপড়াতে যে মহান আল্লাহ কী নিপুণ কারিগরি রেখেছেন, তা জানলে যে কেউ হতভম্ব হয়ে পড়বে।
একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আমরা কোথাও মিষ্টিজাতীয় জিনিস রেখে দিলেই মুহূর্তেই সেখানে শত শত পিঁপড়া জড়ো হয়। এটা কিভাবে সম্ভব? কে তাদের কাছে এই মিষ্টিজাতীয় জিনিসের বার্তা পৌঁছায়? তাদের তো দৃষ্টিশক্তিও অতটা তীক্ষ হওয়ার কথা নয়। মহান আল্লাহ তাদের মধ্যে স্থাপন করে দিয়েছেন একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টেনা, যার মাধ্যমে তারা অন্য পিঁপড়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। সেই বিশেষ অ্যান্টেনার সিগন্যালের মাধ্যমে তারা আশপাশে রাখা খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে যায়। ফলে মুহূর্তেই তারা সেখানে হাজির হয়ে যেতে সক্ষম হয়। মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকেই এভাবে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বলছেন, আল্লাহ তাআলা যখন দুনিয়া সৃষ্টি করেন, তখন তা দুলতে থাকে। তাই তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তাকে দুনিয়ার ওপর স্থাপন করেন। ফলে দুনিয়া শান্ত হয়। পর্বতমালার শক্ত কাঠামোতে ফেরেশতারা বিস্মিত হয়ে বলেন, হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বতমালা হতেও কঠিন কোনো কিছু আছে কি? আল্লাহ তাআলা বলেন, হ্যাঁ, লোহা।
লোহা অত্যন্ত শক্তিশালী ধাতু। পবিত্র কোরআনে এই লোহার নামেই একটি সুরা আছে—সুরা হাদিদ। ‘হাদিদ’ শব্দের অর্থ হলো লোহা। সেই সুরার ২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি আরো নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে।’ ওই আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে এই শক্তিশালী ধাতুটি পৃথিবীতে সৃষ্ট কোনো ধাতু নয়। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি আরো নাজিল করেছি লোহা’ অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে থেকে নাজিল করেছি। লোহার একটি অণু তৈরি করার জন্য যতটুকু শক্তির প্রয়োজন তা এই পৃথিবী কেন, গোটা সৌরজগতেও নেই।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আর্মস্ট্রং বলেন, সম্প্রতি বিজ্ঞান বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের গঠনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এই গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লোহার একটি অণু তৈরি করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন, তা এতই বেশি যে সমগ্র সৌরজগতের শক্তিও এর জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, লোহার একটি অণু তৈরি করতে সৌরজগতের মোট শক্তির চার গুণ শক্তি প্রয়োজন। কাজেই বিজ্ঞানীরা বর্তমানে বলছেন যে লোহা পৃথিবীতে সৃষ্ট কোনো পদার্থ নয়, লোহা এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে। লোহা তৈরির জন্য প্রয়োজন কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রা, যার জন্য প্রয়োজন সূর্যের চেয়েও বড় কোনো গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরণ। আল্লাহু আকবার।
হাদিসের তৃতীয় অংশে ফেরেশতারা মহান আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, হে রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহার চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আগুন। আমরা ওপরের আলোচনায়ই জেনে এসেছি যে লোহা তৈরির জন্য কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন। আর তা হতে পারে আগুনের মাধ্যমে। দুনিয়ায়ও আমরা আগুনের মাধ্যমে লোহাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে পারি। যত বড় বড় দালানকোঠা, গাড়ি কিংবা মেশিন—সব কিছুতেই লোহার প্রয়োজন হয়। এরপর ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুন থেকেও শক্তিমান ও কঠিন অন্য কিছু আছে কি? উত্তরে আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, পানি। পানিকে আল্লাহ তাআলা এতটা শক্তিশালী করেছেন যে সেই আগুন শক্তিশালী সৃষ্টিকে মহান আল্লাহর হুকুমে নিভিয়ে দেয়। এরপর ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রভু! আপনার সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু কি আছে, যা পানির চেয়েও বেশি শক্তিশালী? উত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, বাতাস। বাতাসকে মহান আল্লাহ এতটাই শক্তিশালী বানিয়েছেন যে সে সাগরের পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। কখনো মহান আল্লাহর হুকুমে সুনামির মাধ্যমে সাগরের পানিকে তুলে নিয়ে কোনো জনপদকে গ্রাস করে নিতে পারে। অবশেষে ফেরেশতারা বললেন, হে প্রতিপালক! বাতাস থেকেও বেশি কঠিন ও শক্তিশালী আপনার সৃষ্টির মধ্যে কিছু আছে কি? আল্লাহ তাআলা বললেন, হ্যাঁ, সেই আদমসন্তান, যে ডান হাতে দান-খয়রাত করলে তার বাঁ হাতের কাছে অজানা থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৬৯)
এই হাদিসে মহান আল্লাহ সেই আদমসন্তানকে তাঁর সৃষ্ট শক্তিশালী সৃষ্টি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যে গোপনে আল্লাহর রাস্তায় দান করে। এর জন্য প্রয়োজন হয় ঈমানের শক্তির, যে শক্তি মহান আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝে সেতুবন্ধ স্থাপন করে। এর চেয়ে বড় কোনো শক্তি মহান আল্লাহ তাঁর আর কোনো সৃষ্টিকে দেননি। বহুল প্রচারিত দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সৌজন্যে