সবুজবাংলা ডেস্ক: বাচ্চাদের জন্য মোটেও সুরক্ষিত নয় জনসন বেবি পাউডার, এমন অভিযোগ উঠেছিল আগেই। ভারত ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তের ড্রাগ কন্ট্রোল ব্যুরোর গবেষকরা দাবি করেছিলেন,  জনসন বেবি শ্যাম্পু ও ট্যালকম পাউডারে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি যা থেকে হতে পারে ক্যানসার। সম্প্রতি জয়পুরের জয়পুরের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবোরেটরির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভারতে জনসন বেবি প্রোডাক্টের বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস (NCPCR)। ভারতের পরে এ বার জনসন বেবি পাউডারকে কাঠগড়ায় তুলল আমেরিকার বিচার বিভাগ। শুরু হয়েছে ফৌজদারি তদন্ত।

ট্যালকম পাউডারভিত্তিক নানা প্রোডাক্ট রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন সংস্থার। তার মধ্যে রয়েছে জনসন বেবি পাউডারও। চলতি বছরেই এক মহিলা অভিযোগ তুলেছিলেন এই বেবি পাউডার থেকেই মেসোথ্যালমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এর পরেই ক্যালিফোর্নিয়ার সুপিরিয়ার কোর্ট নির্দেশ দেয়, ওই মহিলাকে ভারতীয় টাকায় প্রায় ১৯৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংস্থাকে। শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়াতেই ১৩০০০-এরও বেশি অভিযোগ জমা হয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে। গোটা বিশ্বে প্রায় ১২ হাজার মামলাকারী অভিযোগ জানিয়েছেন এই সংস্থার বিরুদ্ধে৷অভিযোগ আরও ওঠে, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সংস্থা জানত, তাদের বেবি পাউডারে মিশে রয়েছে অ্যাসবেস্টাস। অথচ সেই তথ্য গোপন করে বাজারে ঢালাও বিক্রি হয়েছে তাদের প্রোডাক্ট।

ব্লুমবার্গের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, সংস্থার সমস্ত প্রোডাক্টের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি জেনেও জনসন অ্যান্ড জনসন কেন তাদের প্রোডাক্টের বিক্রি বন্ধ করেনি, সেই বিষয়ে তাদের বিশদে জবাবদিহি করতে হবে।

মার্কিন সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট বলছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধিক বার পরীক্ষা করা হয় জনসনের ওই পাউডার৷ প্রতিবারই পরীক্ষার পরে তাতে মেলে বিষাক্ত খনিজ অ্যাসবেস্টস৷ বেশ কিছু ক্ষেত্রে মামলায় হেরে গিয়ে মামলাকারীদের মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতেও বাধ্য হয় জনসন৷ এমনকি জনসাধারণকে সতর্ক করার বদলে, জনসনের শীর্ষ কর্তা থেকে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আইনজীবী সকলেই এই সত্যিটাকে সুকৌশলে দিনের পর দিন চাপা দিয়ে এসেছেন।

জনসন বেবি প্রোডাক্ট সত্যিই নিরাপদ কি না সেটা বিশদে যাচাই করতে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও  অসমের ল্যাবোরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। যার মধ্যে রাজস্থানের ড্রাগ কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের দাবি, জনসন বেবি শ্যাম্পু, বেবি পাউডারে মিলেছে ফরম্যালডিহাইড, অ্যাসবেস্টাস-সহ এমন কয়েকটি রাসায়নিক যা থেকে হতে পারে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধি।

ফরম্যালডিহাইড হল বর্ণহীন, ঝাঁঝালো গ্যাস। বিল্ডিং এবং গৃহস্থালির নানা সরঞ্জাম এবং প্লাইউড, ফাইবার বোর্ড, নানা রকম আঠা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই রাসায়নিক। খাদ্যদ্রব্যের প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ব্যবহার হয়। অন্যদিকে, অ্যাসবেস্টাস হলো ক্ষতিকর খনিজ পদার্থ। উচ্চ তাপ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই খনিজ পদার্থটি শরীরে ঢুকলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জনসন অ্যান্ড জনসন অবশ্য তাদের প্রোডাক্ট থেকে ক্যানসার হয় এই আশঙ্কাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। সংস্থার দাবি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের উপরে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এটা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং অ্যাসবেস্টস-মুক্ত। সংস্থার মুখপাত্র এরনি নেউইজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতেই আমরা বিশদে জানিয়েছি, আমাদের প্রোডাক্ট সমস্ত রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত ও বাচ্চাদের জন্য সুরক্ষিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গেও আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করছি। অভিযোগের স্বপক্ষে দেওয়া প্রমাণের বিরুদ্ধে আবেদন জানানোর কথাও বলেছি।”দ্য ওয়াল