পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মানবদেহের ১০টি অঙ্গ

0
(0)
কোরআনে বর্ণিত মানবদেহের ১০টি অঙ্গ

অপার রহস্যের আধার মানবদেহ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করতে বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি নিজেদের নিয়ে ভাববে (চিন্তা-গবেষণা) করবে না?’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ২১) আধুনিক বিজ্ঞান-গবেষণায় মানবদেহের বিস্ময়কর সব রহস্য বের হয়ে আসছে, যা বিবেকবান মানুষকে আল্লাহর পথেই ধাবিত করে, তাঁর পরিচয় লাভে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনেও মানবদেহের প্রায় ২৭টি অঙ্গের আলোচনা এসেছে। তন্মধ্যে বিশেষ ১০টি অঙ্গের আলোচনা তুলে ধরেছেন মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

কোরআনে বর্ণিত অজুবিষয়ক একটি আয়াতে মহান আল্লাহ একসঙ্গে চারটি অঙ্গের উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, হে বিশ্বাসীরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তাহলে বিশেষভাবে (গোসল করে) পবিত্র হও। যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আগমন করে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করো এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো, তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাসেহ করো। আল্লাহ তোমাদের কোনো ধরনের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৬)

উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বান্দার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

মুখমণ্ডল

ওপরে উল্লিখিত আয়াতের প্রথমাংশে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে বিশ্বাসীরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম চেহারা ধৌত করার আদেশ করেছেন। এর ভেতর মুখ, নাক ও দুই চোখ অন্তর্ভুক্ত। প্রথমে কুলি করার মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করা হয়। এর দ্বারা জবানের তওবার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা মানুষের জবান আল্লাহ তাআলার বিধানের বিরোধিতায় সব অঙ্গের আগে থাকে। এ সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তানের বেশির ভাগ গুনাহ তার জবান দ্বারা সংঘটিত হয়।’ তেমনিভাবে কুফরি বাক্য, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা, গালিগালাজ এবং হাজারো অশোভন ও অনর্থক কথাবার্তা জবান দিয়ে বের হয়। এরপর নাকে পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হয়, যা নিষিদ্ধ ঘ্রাণ ও অহংকারী বোধশক্তি থেকে তাওবা করার ইঙ্গিত। তারপর সব চেহারা ও দুই চোখ কপালসহ ধৌত করা হয়, যেটা সামনাসামনি সব গুনাহ এবং চোখের অসৎ দৃষ্টি বর্জনের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। তা ছাড়া চেহারার মধ্যে বাস করে প্রপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনেস নামে একজাতীয় ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত আমাদের দেহের তৈলাক্ত ত্বকীয় অঞ্চলে বেড়ে ওঠে। যখন কোনো কারণে ত্বকে অতিমাত্রায় তেল উৎপন্ন হয় তখন প্রপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনেস অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে বংশ বৃদ্ধি করে। কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে অজু করার মাধ্যমে এই তৈলাক্ত ভাব অনেকটাই কমে যায়। ফলে চেহারা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

বিজ্ঞানীদের মতে, নির্দিষ্ট কোনো মানসিক অবস্থার আবেগ ও ভাবনা-চিন্তার থেকে অনেক বেশি শক্তি রাখে মুখের এক্সপ্রেশন। সঙ্গে সঙ্গে না হলেও এটা কাজ করে ধীরে ধীরে। তাই নামাজে খুশুখুজু আনার জন্যও মুখের একটি বড় অবদান থাকা স্বাভাবিক।

 

চোখ

আল্লাহর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত হলো চোখ। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এটিকে হেদায়েত, ঈমান গ্রহণ, উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। সুরা বালাদের ৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তোমাদের চক্ষু দিইনি?’

চোখ আল্লাহর সূক্ষ্ম কারিগরির একটা নিদর্শন। কোনো বস্তু দেখার জন্য মুহূর্তের মধ্যে আমাদের চোখ ও মস্তিষ্কে কত কিছু ঘটে যায়, সেটা অনুমানের অতীত। আমাদের চোখ ঠিকভাবে কাজ করার জন্য তাতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র পার্টস।

আমাদের চোখের গঠন এতটাই জটিল যে সেটা মাঝেমধ্যে কল্পনাকে হার মানায়। চোখের কার্যপদ্ধতি অনেকটা ক্যামেরার পদ্ধতির মতোই। বলা যায় চোখই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যামেরা। আধুনিক যুগের ক্যামেরার সঙ্গে চোখের তুলনা করতে গেলে দেখা যায়, মানুষের চোখ ৫৭৬ মেগাপিক্সেল। এর ফলে আমরা চোখ দিয়ে প্রায় এক কোটি রং আলাদাভাবে দেখতে পাই। চোখের পাতা কাজ করে ক্যামেরার শাটারের মতো। চোখের ভেতরে আছে স্থিতিস্থাপক লেন্স, যা দর্শনীয় বস্তুকে ফোকাস করে এবং তারপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একসময় তা আমরা দেখতে পাই। এই প্রক্রিয়াকরণ চলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।

শুধুই তা-ই নয়, চোখের মাধ্যমে আহরণ করা অনেক ভালো বা খারাপ দৃশ্য আমাদের স্মৃতিতে জমা থাকে; যা একদিকে যেমন আমাদের ঈমানকে মজবুত করতে পারে, অন্যদিকে আমাদের গুনাহের দিকেও ধাবিত করতে পারে। তাইতো পবিত্র কোরআন ও হাদিসে চোখকে সংযত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। (নুর : ৩০)

 

নাক

পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদায় তাওরাতের বিচারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এ অঙ্গের কথা উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আর আমি এতে তাদের ওপর অবধারিত করেছি যে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম। (সুরা মায়েদা : ৪৫)

নাক আল্লাহ প্রদত্ত অনেক বড় একটি নিয়ামত। নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এতে সরাসরি মস্তিষ্কে অক্সিজেন জোগানের কারণে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ে। পাশাপাশি নাক আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষার সম্মুখ সৈনিক হিসেবে কাজ করে। ঘ্রাণ থেকেও যেমন আমরা সতর্ক হই, তেমনি নাক অনেক দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। নাক অনেকটা ফিল্টারের মতো কাজ করে। ধুলা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ অনেক কিছুই ফিল্টার করে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে নাক। আর নাক দিয়ে শ্বাস নিলে রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার ৯২০ বার শ্বাস নিই। শুধু নাক নিয়ে চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে মহান আল্লাহ আমাদের কত বড় বড় নিয়ামতে সমৃদ্ধ করে রেখেছেন।

মাথা

সুরা মায়েদার ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে আদেশ করেছেন, তোমরা অজুর সময় তোমাদের মাথা মাসেহ করো। এই মাথাও বান্দাকে দেওয়া মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার।

একজন মানুষের মাথা সাজানো হয়েছে ২২টি হাড় দিয়ে। এর মধ্যে অবশ্য মুখমণ্ডলের হাড়ও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মাথার খুলিতে আছে আটটি হাড়। এই আটটি হাড়ের মধ্যে সামনে একটি, মধ্য কপালে দুটি, দুটি অস্থায়ী, মাথার খুলির পেছনে একটি, নাকের পেছনে একটি এথময়েড হাড় এবং একটি স্ফেনয়েড হাড়।

মুখমণ্ডলে আছে ১৪টি হাড়। এর মধ্যে ওপরের পাটি ও নিচের পাটির হাড়ও ধরা হয়েছে।

মাথার খুলি যেকোনো আঘাত থেকে মানুষের মস্তিষ্ক রক্ষা করে। মাথার খুলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছিদ্র। এই ছিদ্রপথেই করোটির নার্ভ যাতায়াত করে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

মস্তিষ্ক

মাথার ভেতরই মহান আল্লাহ সযত্নে রেখে দিয়েছেন মানুষের মস্তিষ্ক, যা মানবদেহের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এখান থেকেই গোটা মানবদেহ নিয়ন্ত্রিত হয়।

মানুষের মস্তিষ্কে আছে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি নিউরন বা নার্ভ সেল। একটি গমের দানার সমপরিমাণ মস্তিষ্ক টিস্যুতে এক লাখের মতো নিউরন থাকে, যেগুলো পরস্পরের সঙ্গে এক বিলিয়ন বন্ধন তৈরি করে। মস্তিষ্কে প্রায় ১০ হাজার রকমের নিউরন রয়েছে। মস্তিষ্কের আদেশ এসব নিউরনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আকারে পৌঁছে। এসব তরঙ্গের গতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি। প্রতিদিন মস্তিষ্কে ১২ থেকে ২৫ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। লো  ভোল্টেজের LED জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট। আর শরীরের যেকোনো অঙ্গের চেয়ে মস্তিষ্কে অনেক বেশি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। আমরা শরীরের প্রয়োজনে যে খাবার খাই, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই খরচ হয় মস্তিষ্কের শক্তি উৎপাদনের পেছনে। এই খাদ্য এবং অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০৪০-৮০ লিটার রক্ত পরিবাহিত হয় ২৪ ঘণ্টায়।

মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মহান আল্লাহ তাতে একটি পর্দা দিয়েছেন; যার নাম ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার। রক্ত থেকে মস্তিষ্কে কী যাবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে এই পর্দা। ক্ষতিকর পদার্থ এই পর্দা ভেদ করে সাধারণত যেতে পারে না। তবে নিকোটিন কিংবা অ্যালকোহলকে বাধা দিতে পারে না সে। হয়তো এ কারণেই মহান আল্লাহ মদ, অ্যালকোহলসহ সব মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক জিনিস হারাম করেছেন।

মজার কথা হলো, মস্তিষ্কে ২২ লাখ সেল আছে। মানুষ তার মাত্র ৩ শতাংশ ব্যবহার করে। খুব বেশি মেধাবীরাও ১০ থেকে ১১ শতাংশের বেশি ব্যবহার করে না।

 

দাড়ি

দাড়ি সব নবীর সুন্নত। পুরুষ ও পৌরুষের প্রতীক। দাড়ির সঙ্গে ধর্মের সখ্য আছে। পবিত্র কোরআনেও দাড়ির কথা উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে, হারুন বলল, ‘হে আমার সহোদর! আপনি আমার দাড়ি ও মাথা (চুল) ধরবেন না। আসলে আমি আশঙ্কা করলাম যে আপনি বলবেন, তুমি বনি ইসরাঈলদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছ এবং তুমি আমার কথার অপেক্ষা করোনি।’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ৯৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতকে দাড়ি রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৪৯১)

তা ছাড়া দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতাও স্বীকৃত। গবেষকদের মতে, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্টাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটা দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানোদের মুুখে তিন গুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে দাড়ি সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এসব বিবেচনা করে উন্নত বিশ্বে দাড়ি রাখার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।

 

হৃৎপিণ্ড (কলব)

পবিত্র কোরআনের ১৩২টি আয়াতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কলব শব্দটি এসেছে। মূলত কলব মানে মন। একে বিশেষ কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব হলেও প্রিয় নবী (সা.) মানবদেহের একটি অঙ্গকে কলব বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর সেই অঙ্গটিই হলো হৃৎপিণ্ড। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সেই গোশতের টুকরাটি হলো অন্তর। (বুখারি, হাদিস : ৫২)

একটি পেশিবহুল অঙ্গ। এটি পৌনঃপুনিক ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালির ভেতর দিয়ে রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত করে। একটি মানব হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭২ বার স্পন্দিত হয়, সে হিসাবে ৬৬ বছরের জীবনে এটি প্রায় ২.৫ বিলিয়নবার স্পন্দিত হয়। এটি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেখানে কোনো সমস্যা হলে তার প্রভাব পড়বে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও। যেমন—উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির রোগ কিংবা ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

 

কান

মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়র একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কান। সুরা মায়েদার ৪৫ নম্বর আয়াতে এর আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণত কানের মাধ্যমেই আমরা সব কিছু শুনে থাকি। কান মানুষের শ্রবণ অঙ্গ। এই শ্রবণশক্তিও জ্ঞানার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমতাবস্থায় যে তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন শ্রবণশক্তি, চক্ষু ও অন্তর, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো। (সুরা আন নাহাল, আয়াত : ৭৮)

মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হলো—বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। বহিঃকর্ণ হলো—কর্ণছত্র, কর্ণকুহর ও কর্ণপটহ দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হলো শব্দতরঙ্গকে বাইরের থেকে মধ্যকর্ণে প্রবাহিত করা।

তারপর মধ্যকর্ণ মেলিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস নামে তিনটি অস্থির মাধ্যমে শব্দতরঙ্গকে কর্ণপটহ থেকে অন্তঃকর্ণে প্রবাহিত করায়। অন্তঃকর্ণের ককলিয়ার ভেতরের শ্রুতিগ্রাহক যন্ত্র শব্দের-উদ্দীপনা গ্রহণ করে অডিটরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রে প্রেরণ করে। ফলে শব্দটি আমরা শুনতে পাই।

কান শুধু শোনার কাজেই ব্যবহৃত হয় না, বরং দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ এবং দেহের প্রতিরক্ষার কাজও করে মহান আল্লাহর এই বিশেষ নিয়ামত।

 

পা

প্রাণিদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পা। সাধারণত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে যেমন আমরা আল্লাহর প্রিয় স্থান মসজিদে গমন করি। হজের মৌসুমে হজে গমন করি। তেমনি কখনো কখনো আমরা গুনাহর কাজেও গমন করি। মহান আল্লাহ তাঁর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গের হিসাবও আমাদের কাছ থেকে নেবেন যে আমরা তাঁর নিয়ামতকে কিভাবে ব্যবহার করেছি। সেদিন মিথ্যা বলার কোনো পথ খোলা থাকবে না। কারণ আমাদের অঙ্গগুলোই সাক্ষ্য দেবে, আমরা তাদের কী কাজে ব্যবহার করেছি।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, যা তারা অর্জন করত।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)

পুরুষের পায়ের টাখনুতেও রয়েছে মহান আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন। পুরুষের পায়ের টাখনুতে রয়েছে, টেস্টোস্টেরন নামক যৌন হরমোন, যা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রয়োজন। এটিকে ঢেকে রাখলে টেস্টোস্টেরন নামক যৌন হরমোন শুকিয়ে যায়।

হয়তো এ কারণেই রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে টাখনুর নিচে কাপড় পরাকে নিষিদ্ধ করেছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত নিজের পোশাক (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৮)

 

হাত

বহু আঙুলবিশিষ্ট একটি অঙ্গ হাত, যা কোনো জিনিসকে আঁকড়ে ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি পরিবেশের সঙ্গে শরীরের যোগাযোগের প্রধান গঠনি। মহামূল্যবান এই অঙ্গ নিয়ে পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন—সুরা মায়েদার পঞ্চম আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো। এ ছাড়া বহু আয়াতে হাত শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে কখনো হাতকে শক্তির প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন—সুরা সোয়াদের ৪৫ নম্বর আয়াতকে শাব্দিক অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়াবে, আর স্মরণ করো আমার বান্দা ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবকে। ‘তারা হাত ও চোখের অধিকারী।’ কিন্তু এখানে এই আয়াতের অর্থ হলো, তারা ছিল শক্তিমান ও সূক্ষ্মদর্শী। কোথাও আবার হাত শব্দ ব্যবহার করে সাহায্য বোঝানো হয়েছে। যেমন—সুরা ফাতহের ১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, আর যারা তোমার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে; আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপর। এখানো ‘আল্লাহর হাত’ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর সাহায্য।

মানবশরীরে হাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এর সাহায্যে মানুষ অনেক কাজ করে থাকে। হাতের আঙুলের ডগায় শরীরের সব স্নায়ুর শেষ প্রান্ত এসে ঘনসন্নিবেশিত হয়েছে, যা পরিবেশের উদ্দীপনা দ্রুত গ্রহণে ও সাড়া প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। হাতের আঙুলের মধ্যেও মহান আল্লাহ তাঁর অসীম শক্তির চিহ্ন রেখে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’ (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত : ৪) মহান আল্লাহ ওই আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, মানুষের আঙুলের অগ্রভাগে তিনি সূক্ষ্ম কোনো রহস্য রেখেছেন, যা তিনি মানুষের পুনরুত্থানের সময়ও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। তা হলো আঙুলের ছাপ।

১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট আবিষ্কার করেন, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার আঙুলের ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিলে যবে। প্রত্যেক মানুষকে শনাক্ত করার জন্য তার আঙুলের ছাপই যথেষ্ট। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন অপরাধী শনাক্ত হয়ে যায় হাতের এই আঙুলের ছাপের মাধ্যমেই। অনেকটা হাতের ছাপই বলে দেয়, অপরাধী কে হতে পারে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, যা তারা অর্জন করত।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)

কোরআনের এই আয়াতের কিছুটা ব্যাখ্যা আমরা দুনিয়াতে পেয়ে গেছি। আখিরাতের এর রূপ কতটা অত্যাধুনিক হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন।তথ্য সুত্র বহুল প্রচারিত দৈরিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার ইসলাম ও জীবন পাতা

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.