সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সাধারাণ মানুষকেও ত্রাণবিতরণের সুযোগ দিতে হবে – ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিব

0
(0)

আবদুল্লাহ আল নোমান বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং মিয়ানমার সরকার ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদ না করে চীন, আমেরিকা ও ভারত গণহত্যার নির্লজ্জ পাবম্বন করছে। মিয়ানমারে ধারাবাহিকভাবে সেনাবাহিনী-পুলিশ ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও পাশবিক নির্যাতন ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। নিজ দেশের জনগণের উপর সেদেশের সরকারের বর্বর নির্যাতনের ইতিহাস পৃথিবীতে নেই।
আজ (৫ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার প্রেসকাবে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের মহাসচিব একথা বলেনে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সভাপতিমওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, মুফতি নূরউন নাবী, জেলা সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলী, সেক্রেটারী মাওলানা শোয়াইব আহমদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী, সহ সভাপতি মাওলানা এবিএম অলিউল্লাহ প্রমুখ।
অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, স্রোতের মতো রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকেছে। দলের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই নির্দেশে কুরবানীর ঈদের দিন থেকে এ পর্যন্ত জরুরী ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহতভাবে চলছে। রোহিঙ্গাদের স্থায়ীসমাধান না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ তৎপরতা চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ধারাবাহিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা, শুকনো খাবার বিতরণ, লঙ্গরখানার মাধ্যমে রান্না করা খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, শিশুখাদ্য অর্থাৎ দুধ, চিনি, বিস্কুট সরবরাহ, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে মেডিকেল ক্যাম্প করে ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, স্যানিটেশন সামগ্রী বিতরণ, অস্থায়ী ঘর তৈরীর সামগ্রী বিতরণ ও অনেককে ঘর নির্মাণ করে দেয়া, বাথরুম তৈরী, গভীর ও অগভীর নলকুপ স্থাপন, অস্থায়ী মসজিদ ও মক্তব নির্মাণ, কুরআন শরীফ বিতরণ ইত্যাদি কাজ অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ধারাবাহিকতার সাথে আঞ্জাম দিয়ে আসছে। পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় নদী পারাপারের সুবিধার জন্য বাঁশ ও কাটের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের নির্যাতন থেকে বেঁচে আসা হিন্দু পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ত্রাণ তৎপরতায় আমাদের সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের সমম্বয়ে গঠিত মনিটরিং সেল ত্রাণকার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন। ত্রাণ বিতরণ ও পরিদর্শনে এসেছেন দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, একাধিকবার এসেছেন মহাসচিব অধ্য হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। এছাড়াও এসেছিলেন, যুগ্ম মহাসচিব, সহকারী মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
আমাদের পাশাপাশি ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিতে দেখেছি দেশের অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনকে, অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল কর্তৃপও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানবতার পাশে দাড়িয়েছে, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে শামিল হয়েছেন এই মানবতার মিছিলে। সবার উদ্দেশ্যই ছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত অসহায় মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট লাঘব করা।
অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, বিদেশ থেকে আসা ত্রাণবিতরণ কার্যক্রম দীর্ঘ সুত্রিতা না করে দ্রুত বিতরণ করতে হবে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যারা পরিকল্পিতভাবে সুশৃঙ্খলতার সাথে তৎপরতায় সম্পৃক্ত আছে তাদের সহযোগীতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের পর্যবেণ হলো, গহীন জঙ্গল ও পাহাড়ে যেসব রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে, তারা কিন্তু খুব সামান্যই ত্রাণ সামগ্রি পেয়েছে। তাদের কাছে অতিদ্রুত খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো দরকার। সেনবাহিনীর পাশাপাশি ব্যক্তি, সংগঠন ও সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ত্রাণতৎপরতার চালমান থাকলে এই সংকট সমাধান সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
প্রেস ব্রিফিং এ তিনি আরো বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের শুধু নির্যাতনই করা হয়নি, তাদের সকল প্রকার নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানবতার খাতিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে সরব রয়েছি। গত বছর নির্যাতন চলাকালীন পীর সাহেব চরমোনাইর নেতৃত্বে ঢাকায় ও সারাদেশে বিােভ প্রদর্শন, মিয়ানমার দুতাবাস ঘেরাও, জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি পেশ এবং গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছিলাম। এবারও রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা শুরু হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজধানীসহ সারাদেশে একাধিকবার বিােভ প্রদর্শন, গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার ঢাকায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলায় জেলায় বিােভ মিছিল, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার মিয়ানমার দুতাবাস ঘেরাও, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার গণমিছিল ও জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর প্রদত্ত স্মারকলিপিতে রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারের আরাকানে ফিরিয়ে নেয়াসহ ১১ দফা দাবী পেশ করা হয়। ত্রাণতৎপরতা জোরদার ও রোগিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধানের জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পেশ করছে-
১। অবিলম্বে সব ধরনের নিপীড়ন, নৃশংসতা, নির্বাসন, হত্যা, জাতিগত নিধন ইত্যাদি বন্ধ করার জন্য সরকারকে কুটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ২। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ত্রাণ বিতরণে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ৩। রোহিঙ্গা সংকট স্থায়ী সমাধানের ল্েয সকল মুসলিম রাষ্ট্রদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এর আয়োজন করা। ৪। আগত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিটা ক্যাম্পে উন্নত মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। ৫। নিবন্ধন কার্যক্রম আরো দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করার জন্য একাধিক বুথ স্থাপন করা। ৬। দৃষ্টিভঙ্গির মানোন্নয়নে সচেতনতামুলক শিা প্রকল্প চালু করা। ৭। শিশু-কিশোরদের জন্য ধর্মীয় শিার পাশাপাশি জাগতিক শিা চালু করা। ৮। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ নিরসনে সরকারের কার্যকরী পদপে গ্রহণ করা।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.