মাঝরাতে কারা হাঁটে ?
সবুজবাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ: সাবধান! বাড়িতে ভূত আছে! একই দিনে পরিবারের ১১ সদস্যের আত্মহত্যার সেই ঘটনার পর থেকে বুরারির সন্তনগরের ভাটিয়া বাংলোর আশপাশ মারাতে রাজি নন এলাকার বাসিন্দারা। শুনসান ওই বাংলোতে বর্তমানে তিনজনের বাস। পরিবারেরই এক আত্মীয় দীনেশ গত কয়েকদিন ধরে বসবাস শুরু করেছেন ভাটিয়া বাংলোতে। আর রয়েছেন পরিবারের বহু দিনের চেনা আহমেদ আলি আর আফসার আলি। দীনেশ তেমন কিছু না বললেও, আহমেদের দাবি, মাঝরাতে বাড়ির আনাচ কানাচে ঘুরে বেড়ায় অপছায়ারা। আত্মঘাতীদের ফিসফাস শোনা যায় ঘরের ভিতর। কারোর চলার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আচমকাই।“আমরা যে ঘরে শুচ্ছিলাম সেই ঘরেরই আলমারি থেকে উদ্ধার হয়েছিল বাড়ির প্রবীণ সদস্যা ৮০ বছরের নারায়ণী দেবীর ঝুলন্ত দেহ। প্রথম দিন কিছু বুঝিনি, তারপরই একটা অদ্ভুত রকমের অস্বস্তি হতো। মনে হতো ঘরে কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে,” দাবি আহমেদ আলির। প্রায় একই রকম অনুভূতি হয় আফসারেরও। আহমেদ আরও বলেন, “লোকে বলে এই বাংলোতে ভূতের উপদ্রব রয়েছে। আমরা মানতে চাইনি। আমাদের পরিবারও এখানে থাকতে মানা করেছিল। এখন মনে হচ্ছে সত্যি কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটছে এখানে।
২০১৮ সালের জুলাইতে বুরারির ওই বাংলোতেই গণআত্মহত্যা করে পরিবারের ১১ সদস্য। মৃতদেহের পাশে একটি ডায়েরিও উদ্ধার হয়। যার প্রতি পাতায় ছিল চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। যার থেকে জানা যায়, ওই বাড়ির বৃদ্ধা, মাঝবয়সি থেকে কিশোর-কিশোরীদের ১১ জনই মৃত্যু কামনা করছিলেন। পুলিশেরও ধারণা, শেষ মুহূর্তে কোনও ঐশ্বরিক শক্তিতে তাঁরা বেঁচে যাবেন বা তাঁদের পুনর্জন্ম ঘটবে, এমন কুসংস্কারই ভাটিয়া পরিবারে তৈরি হয়েছিল। অন্তত ডায়রি থেকে তেমনই অনুমান পুলিশের। ১১ জনের প্রাথমিক ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, সকলেরই গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু হয়েছিল। কারও শরীরে চোট-আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। যা থেকে অনুমান, কেউ জোর করে তাঁদের গলায় ফাঁস দেয়নি।তদন্ত যত এগিয়েছে ততই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রতিবেশীরাও দাবি করেছিলেন, গোটা পরিবার মুক্তির খোঁজে অতিপ্রাকৃত চর্চায় জড়িত ছিল। সম্ভবত এর পিছনে ছিলেন কোনও তান্ত্রিক। এমনকি পরিবারের সদস্যেরা মৃত আত্মার সঙ্গেও কথা বলতেন বলে জানা যায়। গুপ্ত সাধনার জন্যই নাকি ওই বাড়িতে তৈরি করা হয়েছিল ১১টি পাইপ। ১১টা রড দিয়ে তৈরি বাড়ির সদর দরজা, জানলাও ১১টি। মোট ১১ জনের মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।দীনেশের কথায়, “পরিবারের একমাত্র জীবিত আত্মীয় হিসেবে আমি ওই বাড়ির মালিকানা পাই গত বছর অক্টোবরে। ইদানীং আলি ভাইয়ের নিয়ে এখানে থাকছি আমি। তেমন কিছু চোখে না পড়লেও, শুনেছি এই বাড়িতে আত্মাদের প্রভাব রয়েছে।” বাড়ি বিক্রির জন্য ক্রেতাদের খোঁজ করছেন বলে জানিয়েছেন দীনেশ। একজনের সঙ্গে দেড় কোটি টাকাতে রফাও হয়েছে। কথাবার্তা চলছে আরও কয়েকজনের সঙ্গে। পাড়াতেই ইস্ত্রির দোকান সন্দীপের। জানিয়েছেন, এলাকার লোকজনের বদ্ধমূল ধারণা এই বাড়িতে ভূতের আনাগোনা আছে। রোজ রাতে কিছু না কিছু ঘটে। সেই কথা ছড়িয়ে পড়তে কেউ বিশেষ এই বাড়ির ধারকাছে আসেন না। তবে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসারদের ধারণা, বুরারির ভাটিয়া পরিবার এক বিরল মানসিক রোগে ভুগছিলেন। যার নাম ‘ফোলি আ দু’ বা ‘শেয়ার্ড সাইকোসিস ডিসঅর্ডার’। কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মানসিক যোগ থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে কারোর মধ্যে। যেখানে অসুস্থ ব্যক্তি মনে করেন, তাঁর সঙ্গে অন্য জন কথা বলছেন। সে ব্যক্তি মৃত হলেও ওই ব্যক্তির মনে এমন অলীক ধারণা হয়। পরিবারের বাকিদের মধ্যেও এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই থেকেই হয়তো গণআত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বুরারির ভাটিয়া পরিবার। দ্য ওয়াল