ছিন্ন মূল কবি জিয়াউল হক

0
(0)

এই ছিন্নমূল মানুষ গুলোকে
তোমরা কি এতটুকু আশ্রয় দিতে পার না!
যাদের নেই এতটুকু মাথা গুঁজবার ঠাঁই,
যারা অসহায় এই মহা সম্পদের মাঝে;
এই নব সভ্যতার চোখ ঝলসে দেয়া আলোয়
যাদের বুকে অহরহ দীর্ঘশ্বাস জেগে ওঠে;
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়-
যারা ঘুমায় সড়কে আর গাছ তলায়
দূর্ভিক্ষের দূঃসহ জ্বালায় যাদের চোখে নিদ্রা আসে না-
তোমরা কি পার না তাদের এতটুকু সহানুভূতি জানাতে!
যাদের পেটে ভাত নেই, পরনে বস্ত্র নেই-
দূর্ভিক্ষ আর রোগ-জড়া যাদের নিত্য সঙ্গী;
তোমরা কি পার না তাদের পাশে একটু দাঁড়াতে!
জানি, ওদের দেখলে তোমাদের চোখ জ্বালা- পোড়া করে;
ঘার ধরে বের করে দাও তোমাদের প্রাসাদ দ্বার থেকে।
ভোট ছাড়া ওদের নোংরা বস্তিতে তোমাদের পদচারণা কখনও পড়েনা।
কিন্তু কেন! কেন! মানুষে মানুষে এ ভেদাভেদ!
জানি, তোমরা সৌন্দর্র্যের পিয়সী।
বিধাতা তোমাদের সাজানো সংসার।
ওদের সংসার কালিমায় ভরা-
বিধাতার আসন ওদের কোথাও নেই!
তাই, তোমরা সবে মিলে হাত তুলে
বিধাতার কাছে কি প্রাথর্না টুকুও করতে পারনা?
এই ছিন্নমূল, অসহায়, নোংরা মানুষগুলো
পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাক!
শত অত্যাচার, ব্যর্থতার গøানি, দুঃখের বোঝা
মাথায় নিয়ে ওরা পৃথিবী থেকে চলে যাক;
তোমাদের পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে উঠুক!

ছিন্নমূল কবিতার আলোচনাঃ ছিন্নমূল মানুষের বেদনা বিন্দুর যন্ত্রণা বিদ্ধ জীবন যাপন বাস্তবে প্রত্যক্ষণ করে, নব্বই দশকের কবি জিয়াউল হক সভ্য সমাজের উচুতালার মানুষদের বিবেক বোধকে জাগিয়ে, দলিত, লাঞ্চিত ও আশ্রয় হারাদের অবস্থা তুলে ধরেছেন। যান্ত্রিক যুগ, প্রযুক্তির যুগ ও পুজিবাদের যুগ। অন্তরীণ বিষয় বন্ধতা বা- ভয়ভীতিতে কবি টলে না। তাই সা¤্রাজ্যবাদ ও পুজিবাদের চরম উৎকর্ষ সাধিত হওয়ায়, আলো ঝলমল উচু তলার মানুষদের কাছে ছিন্নমূল মনুষের দাবিকে কবি স্পন্দিত করেছেন।
সাধের স্বাধীনতার সাদ জনগণকে সমান ভাবে ভোগ করাতেই হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। কিন্তু ভৌগোলিক ভাবে এ দেশ স্বাধীন হলেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সমাজতান্ত্রিক অধিকার তাতে আসেনি। ফলে পাকিস্তান কালিক ২২ পরিবার ভেঙ্গে সৃষ্টি হল ২২ লক্ষ ধনী পরিবার। সামরিক শাসন ও নৈরাজ্যময় পরিস্থিতিতে শোষক শ্রেণির হাতে চলে গেল দেশের অর্থনীতি। শোষিত মানুষ দিন দিন নিঃস্ব হয়ে গেল। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের অভাবে- তারা পথে ঘাটে মানবেতর জীবন-যাপন করে।
স্বার্থান্বেষী মানুষ বিলাস বহুল গাড়ি বাড়ির মালিক হয়ে, আরাম-আয়েসে বসবাস করে তাÐব চালায়। আর সর্বহারা শ্রেণি ভাতের অভাবে কঙ্কালে পরিণত হয়। এসব দৃশ্য-দেখে বাস্তবতার আলোকে কবি ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশায় কাতর হয়ে, ছিন্নমূল কবিতাটি রচনা করেন। যুগ-রসধারা, জীবন দর্শন ও পরিবেশের স্বাক্ষী কবি হৃদয়। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতই কবি জিয়াউল হকের চোখ বারবার ছুটে যায়- দুর্দশাগ্রস্ত গরিব মানুষের কাতারে। তাই তিনি বলেন-
এই নব সভ্যতার চোখ ঝলসে
যাদের বুকে অহরহ দীর্ঘশ্বাস জেগে ওঠে
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
যারা ঘুমায় সড়কে আর তোমরা থাক উচু তলায়।
ভোগবাদী মানুষ পুজিবাদের ফাপর দাদালি করে আধুনিকায়নের উৎকর্ষে উৎকর্ষিত। উচুতলার মানুষের জীবন জীবীকা, আরাম আয়েস
মখমল পরিবেশ, ফুলের বিছানা, বৈঠকখানা- সবই উন্নত। গরিব শ্রেণির দিকে চোখ দেয়ার চিন্তাও তাদের নেই। তাদের শান সওকত পূর্ণ বিলাস বহুল জীবন ব্যবস্থা দেখলে সভ্যতার চোখও ঝলসে যেতে পারে।
পক্ষান্তরে, -যাদের থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় রাতদিন মর্মভেদী ব্যথার দীর্ঘশ্বাস জেগে ওঠে, যাদের নুন আনতে পান্তা ভাত ও শেষ হয়ে যায়, যারা রাস্তার পাশেও গাছতলায় আশ্রয় নেয়, অভাবের কারণে চিন্তায় যাদের ঘুম আসে না; তারা ও তো সভ্য জগতেরই মানুষ। কবি তাই উচুতলার অভিজাত শ্রেণিকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, তারা কি গরিবদের একটু শান্তনা জানাতে ও পারে না? গরিবদের খোজ খবর নেয়া তো দূরের কথা, তাদের আঙ্গিনায় দেখলেও বড় লোকদের শরীরে জ্বালা ধরে। এরা ধনীদের দরজার ভিক্ষা চেয়ে দাড়ালে দারোয়ান দ্বারা তাদের তাড়িয়ে দিয়ে থাকে। একমাত্র ভোটের সময় হলে ওদের নোংড়া বস্তিতে দু’একজন নির্বাচন প্রাথীকে সেখানে যেতে হয়। কারণ তখন শুধু তারা গণতান্ত্রিক অধিকার পায়। ইদানিং কিন্তু ভোট দিতেও তাদের দরকার হয় না। তাই কবির সাহসিক জিজ্ঞাসা যে-
কিন্তু কেন! কেন! মানুষে মানুষে এ ভেদাভেদ!
মূলত: মানুষে মানুষে এমন পার্থক্যের কারণ হল ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার মূলে রয়েছে- বুদ্ধিবাদী শক্তিমান মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে, দুর্বলদের হটিয়ে তাদের শোষণ করে। ক্ষমতাবান হয়ে তারা তাদের স্বার্থে আইন পাশ করে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদেরও পক্ষে রাখে।
পক্ষান্তরে যদি ব্যক্তিমালিকানার বিলোপ ঘটিয়ে সমাজতন্ত্রের লক্ষে সব কিছু রাষ্ট্রত্ত¡ হত; তাহলে কিন্তু মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকত না। কিন্তু ধনী শ্রেণি চায় অনাহারে অর্ধাহারে থেকে আস্তে আস্তে ধুকে ধুকে ওরা মারা যাক। এ জন্য দায় ঠেকে তারা গরিবদের কাজের বিনিময়ে খাবার দিলেও খুব কম দেবে। এটাই ধনী চরিত্র। ছিন্নমূল মানুষের জীবন যন্ত্রণা বোধ ও ধনী চরিত্রের বৈশিষ্ট এটাই। দার্শনিক অতিজ্ঞানে কবি ছিন্নমুল মানুষের অধিকার আদায়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। দার্শনিক অভিজ্ঞানে কবি জিয়াউল হকের প্রশ্ন বুদ্ধি বিবেক ও বিচার জ্ঞানে মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণি, কিন্তু প্রাণ সবার থাকলে ও মরণশীলতার ব্যবধানে দূর করে দে’য়া হয়েছে শোষিত ছিন্নমূলদের। তাই কবি নীতিগত আর্দশবাদ দিয়ে শোষণ মুক্ত সমাজ কায়েমে বিশ্বাসী, এটাই তার কবিতার দ্রোহ।
পক্ষান্তরে, অবক্ষয়বাদীরা ইউরোপের বোদলেয়ার, বোলতেয়ার ও ব্রঁতের সুর রিয়ালিজম সে দেশের নৈরাশ্যময় ধূসর পরিস্থিতিতে পুজিবাদের প্রয়োজন যে Decadentism বা অবক্ষয় দ্বারা পারভারটেড হয়েছেন ফ্রান্সের সেই অবক্ষীয় অবস্থার কথা হল – In the after ninteenth century in france, some proponents of the dectriness of Aestheticism, especially chrles Bau declare, also espoused views and values which developed into a moment called the decedence. ভাবার্থে বলা যায় উনিশ শতকের ফ্রান্সের পুজিবাদের জোর জুলুম অত্যাচারে অবক্ষয়ের পরিবেশ এমন তুঙ্গে উঠেছিল যে, সেখানে মানবতা, নৈতিকতা, ভুলে গিয়ে সৃষ্টি করল নৈরাশ্য, নাস্তিক্য, দেহবাদ, হতাশা ও ব্যর্থতা। পক্ষান্তরে কবি জিয়াউল হক রবী নজরুল ধারায় দ্রোহের কথা বলেছেন।
এ ধরণের ধার করে আনা পর গাছা, পরজীবী কবিতাকে কবিতা না বলে ভবিতা বলাই শ্রেয়।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.