সব প্রযুক্তি ফেল ভারতের নিখোজ বিমান বাহিনীর বিমান খুজতে উপজাতির দুর্ধর্ষ শিকারিদের দল৷

0
(0)

সবুজবাংলা ডেস্ক: ঠিক এক সপ্তাহ হল আজ। গত সোমবার থেকেই গোটা অরুণাচলপ্রদেশ তোলপাড় করে চলছে তার খোঁজ। উঠেপড়ে লেগেছে সেনাবাহিনী, ইন্দো–তিব্বত সীমান্ত পুলিশ ও রাজ্য পুলিশ। এমনকী স্যাটেলাইটও পাঠিয়েছে ইসরো। কিন্তু এখনও নিখোঁজ ভারতীয় বায়ু সেনার পণ্যবাহী এএন–৩২ বিমান!

বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছেছে বিষয়টি। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ভেঙে পড়া বিমানটি যেন রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে! বিমান ভেঙে পড়ে যে সকলে মারা গেছেন, তা এক রকম নিশ্চিত উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ যাবে কোথায়! বিমানের খোঁজ মিললে নগদ পুরস্কারও ঘোষণা করে রেখেছে বায়ুসেনা। নিখোঁজ বিমানের সন্ধান দিতে পারলেই হাতে হাতে মিলবে ৫ লক্ষ টাকা।

আর এই সময়েই এবার উদ্ধার অভিযানে নামতে চলেছেন তাঁরা। তাঁরা না কোনও সেনাবাহিনীর সদস্য, না তাঁরা প্রযুক্তির দিক থেকে তুখোড় কোনও জ্ঞানের অধিকারী। এমনকী দুর্গম পার্বত্য এলাকায় এরকম কঠিন তল্লাশি অভিযান চালানোর মতো কোনও প্রথাগত প্রশিক্ষণও নেই তাঁদের। কিন্তু তাঁদের যে দক্ষতা আছে, তা হয়তো পৃথিবীর কারও নেই এই কাজটি করার জন্য।

তাঁরা হলেন, ‘আদি’ নামের উত্তর-পূর্ব ভারতের এক প্রাচীন উপজাতির দুর্ধর্ষ শিকারিদের দল৷ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবন তাঁদের। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই নিত্য বেঁচে থাকা। খারাপ থেকে খারাপতম পরিস্থিতিতে লড়াই করাই যাপন তাঁদের। এই জনগোষ্ঠীর কয়েক জনকেই শেষমেশ খুঁজতে পাঠানো হয়েছে বিমানটির সর্বশেষ অস্তিত্ব৷ আশা করা হচ্ছে, এক সপ্তাহ ধরে যা সম্ভব হয়নি, তা হয়তো এবার হবে। দুর্গম কোনও পার্বত্য খাঁজের ভিতর থেকে খোঁজ মিলবে বিমানের।

উদ্ধারকারীরা এক সপ্তাহ ধরে অভিযান চালানোর পরে জানিয়েছেন, অরুণাচলের যে জায়গাটিতে বিমানটি ভেঙে পড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যেখানে সূর্যের আলো প্রায় ঢোকেই না৷ কনকনে ঠান্ডা৷ দুর্গম ভয়াবহ পরিবেশ ও অতল খাদের অনেকটা নীচে রুপোলি সুতোর মতো দেখা যায় নদী৷ আর মাথার উপরে ঘন জঙ্গল পার করে আকাশ দেখাই যায় না। তাই ধারণা করা হচ্ছে, সেইখানেই কোনও এক পাহাড়ি খাঁজে পড়ে রয়েছে বিমানটি।

এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ যেখানে এক সপ্তাহ ধরে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে আদি উপজাতির মানুষরাই হয়তো ভরসা।তাঁদের কোমরে ধারালো লম্বা অস্ত্র, হাতে বর্শা। মাথায় ধনেশ পাখির পালক দিয়ে তৈরি টুপি। পিঠে তীর-ধনুক। পরনে গরম পোশাক। এই সাজেই নিয়ে মাইলের পর মাইল এই ‘আদি’ মানবেরা চলতে পারেন বলে জানা গেছে৷ প্রচণ্ড কষ্টসহিষ্ণু তাঁদের জীবনযাত্রা৷ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতার কারণেই আছে এক সহজাত হিংস্রতা৷

তবে এমনিতে বহির্জগতের সঙ্গে তেমন সংযোগই নেই এঁদের। নিজেদের গোষ্ঠীর বাইরের কাউকে তাঁরা কিছু বলেনও না৷ কিন্তু তাঁদের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হতে পারে, প্রকৃতি নষ্ট হতে পারে– এমন কিছুই আবার সহ্য করেন না তাঁরা৷ তুমুল রকমের বন্য এই ‘আদি’ চরিত্র, নৃতত্ত্ব ও প্রকৃতি বিশেষজ্ঞদের কাছে এখনও রহস্য৷ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা মনে করছেন, এরাই খুঁজে বার করতে পারবেন বিমানটির অবশেষ৷ অরুণাচল সরকারও ভরসা রেখেছেন এই মানুষগুলির উপরেই৷

কারণ, দুর্গম এলাকায় চমকপ্রদ উপায়ে পাখি শিকার করার হরেক পদ্ধতি রয়েছে তাঁদের৷ তেমনই রয়েছে বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ ধরে ফেলার নানা রকম উপায়ও৷ আবার কৃষিতেও তাঁরা স্বচ্ছন্দ৷ তবে মূলত শিকারি জীবনকেই তাঁরা বেছে নিয়েছেন৷ অরুণাচলের সিয়াং পার্বত্য এলাকার ঘন জঙ্গলের খাঁজখোঁজ তাঁদের মতো কেউ চেনেন না বা বোঝেন না৷ স্থানীয় বোকর ভাষায় তাঁরা কথা বলেন৷ সকলের পক্ষে এই ভাষা বোঝা সম্ভব নয়৷ একমাত্র তাঁদের ঘনিষ্ঠরাই সেটি বুঝতে পারেন কিছুটা৷

গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ, ৮ জন বায়ু সেনা কর্মী-সহ ১৩ জন যাত্রী নিয়ে অসমের জোরহাট থেকে চিন সীমান্ত লাগোয়া অরুণাচল প্রদেশের মেচুকা অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ‘অ্যান্টোনভ এএন-৩২’ বিমান। দুপুর একটার সময়ে শেষ বার বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের সঙ্গে বিমানটির রেডিও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত বিমানটির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে বিমানবাহিনী সূত্রে।

 

অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তল্লাশি অভিযানে নামানো হয়েছে স্থানীয় উপজাতি জনগোষ্ঠীর ওস্তাদ শিকারিদের৷ তাঁরাই একমাত্র গভীর থেকে গভীরতর অরণ্যে ঢুকতে পারে ওই এলাকায়৷ রাজ্য সরকার জানিয়েছে, প্রতিটি দলে রয়েছেন তিন-চারজন শিকারি৷ তাদের তিনটি ভাগে ভাগ করে নানা দিকে পাঠানো হয়েছে।প্রথম দলটি অতি দুর্গম এলাকা বায়োর আদি পার্বত্যাঞ্চলে বিমানটির খোঁজ শুরু করেছে। দ্বিতীয় দলটি পারি এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। তৃতীয় দলটি ভিরগং পার্বত্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে৷

ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত লাগোয়া  চিন ও মায়ানমার। এই রাজ্যের পূর্ব দিকের বেশ খানিকটা এলাকা এখনও আদিম জীবনের আখর৷ এখনও এই এলাকার মানুষ ও প্রকৃতির বহু রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি বিজ্ঞান তথা সভ্যতা। সেই এলাকারই সব চেয়ে দক্ষ মানুষগুলি এবার নেমেছেন হারিয়ে যাওয়া বিমানের খোঁজে। দেখা যাক, সন্ধান মেলে কি না! সৌজন্যে দ্যা ওয়াল ব্যুড়ো

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.