ভিয়েতনামের যুবকট্রান মিন তিয়েন প্রচলন শুরু করেছেন প্রাকৃতিক স্ট্র-

0
(0)

আহছান উল্লাহ: আমাদের চারপাশে যে প্রকৃতি,যে পরিবেশ আর যে প্রতিবেশ তার মায়ায় আমরা বেড়ে উঠি। প্রকৃতির সন্তান মানুষ। নগর সভ্যতার অনিবার্জ বিকাশের সঙ্গে প্রকৃতিকে দুরে ঠেলে,আচার,আচরণ,আহার-বিহার,বসন-ব্যাসনে কৃত্রিমতাকে নির্ভর করতে শুরু করে মানব সম্প্রদায়। আর এ সবের ফলে মানব ও প্রকৃতির স্বাভাবিক আত্মীয়তা বিনষ্ট হয়।রোগ শোক আর জরাজির্নতা মানব জীবনকে করে তোলে বিপর্যস্ত। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এই চরম বিকাশের যুগে তাই মানুষ আবার বোধ করে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়াটা হবে মানুষ,মানব সভ্যতা,মানব স্বাস্থ্য রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়। ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতি। যেনতেন প্রকারে দূষণ রুখতে না পারলে, রক্ষা করা যাবে না তাকে। এ কথা মোটামুটি সকলেরই জানা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। নানা পরিবেশ-আন্দোলন তৈরি হয়েছে শেষ কয়েক বছরে। তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হল, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা। কিন্তু ব্যবহার করা উচিত এ কথা জানলেও, এটাও প্রায় সকলেই জানেন, যে এ কাজটি চাইলেই করা মুশকিল। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও, অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। এ রকমই একটি অসম্ভব ক্ষেত্র হল, প্লাস্টিকের স্ট্র-এর ব্যবহার। নানা পানীয় খাওয়ার জন্য বা অন্য নানা কাজে প্লাস্টিকের এই স্ট্র-এর ব্যবহার যেন অপরিহার্য। এই বিষয়েই ছোট্ট অথচ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ করেছেন ট্রান মিন তিয়েন। ভিয়েতনামের এই যুবক প্রচলন শুরু করেছেন প্রাকৃতিক স্ট্র-এর! প্রকৃতির বুক থেকে খুঁজে পাওয়া এই স্ট্র-এর মাধ্যমে কোনও পানীয় খেতেও কোনও অসুবিধা হবে না, আবার হবে না কোনও রকম পরিবেশ দূষণও। নিজের আবিষ্কারকে বহুল প্রচারিত করতে একটি সংস্থাও খুলেছেন ট্রান মিন তিয়েন। অং হাট কো নামের ওই সংস্থায় ঘাস দিয়ে দু’ধরনের স্ট্র তৈরি করছেন তিনি। ভিয়েতনামে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যে লেপিরোনিয়া আর্টিকুলাটা ঘাস, তাই দিয়েই তৈরি হচ্ছে এই স্ট্র-গুলি। ঘাসটির স্থানীয় নাম কো ব্যাং। দক্ষিণ-পশ্চিম ভিয়েতনামের মেকং ডেলটা এলাকায় এই ঘাসের ফলন অফুরন্ত।খড়ের মতো ফাঁপা, অথচ আর একটু শক্ত এই ঘাসটি প্লাস্টিকের স্ট্র-এর উপযুক্ত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ভিয়েতনাম সরকারও। তিয়েনের এই কাজকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে তারা। আপাতত ঘাসটি দু’রকম ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্ট্র-এর বিকল্প হিসেবে। কাঁচা ঘাসটি দিয়েই পান করা হচ্ছে পানীয়, অথবা শুকিয়ে নিয়ে শক্ত করে নেওয়া হচ্ছে খানিক।একটি ভিডিও-য় দেখা যাচ্ছে, ঘাসটি বড় হওয়ার পরে সেটি সংগ্রহ করে ভাল করে ধোয়া হচ্ছে। তার পরে সেটি আট ইঞ্চির টুকরোয় কাটা হচ্ছে। এর পরে একটি লোহার তারের সাহায্যে স্ট্র-টির মধ্যে ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে ভেতর দিকটা। তার পরে আরও এক বার ভাল কর ধোয়া হচ্ছে সেটি। এর পরে হয় ওই অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে, নয়তো আরও খানিক প্রসেস করার পরে বান্ডিল বেঁধে বিক্রি করা হচ্ছে। বান্ডিলটি অবশ্যই বাঁধা হচ্ছে কলাপাতা দিয়ে।তিয়েন জানিয়েছেন, এই ঘাস দিয়ে বানানো স্ট্র-গুলি রেফ্রিজারেটরে বা কোনও এয়ারটাইট জায়গায় রাখলে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত তাজা থাকবে। কিন্তু আরও বেশি দিন এই ঘাসের স্ট্র ব্যবহার করতে চাইলে, তিয়েন জানাচ্ছেন, ঘাসগুলিকে নুন জলে খানিক ক্ষণ ফুটিয়ে, তার পরে শুকনো করে, শুকনো ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। এ ভাবে ছ’মাস পর্ন্ত ব্যবহার করা যাবে একটি স্ট্র।শুধু তা-ই নয়। কাঁচা হোক বা শুকনো, যেমন স্ট্র-ই ব্যবহার করুন না কেন, ব্যবহার হয়ে গেলে এই ঘাসটি চিবোলে, দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার হয়।এখন তিয়েনের সংস্থায় ১০০টি শুকনো ঘাসের স্ট্র-এর বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে হাজার ভিয়েতনামি ডং-এর বিনিময়ে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন টাকা। তাজা ঘাসের স্ট্র হলে, সেই দাম এক একটির জন্য প্রায় দু’টাকা।চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন, প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। বরং পুষ্টিবিদদের মতে, বেশি পরিমাণে স্ট্র ব্যবহার করলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। কারণ স্ট্রয়ের মধ্যে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পলিথিন থাকে। এই উপাদান শরীরে মেদ জমায়। গরম পানীয়ের সংস্পর্শে প্লাস্টিকের স্ট্র এলে, সেই স্ট্রয়ের অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা মিশে যেতে পারে রক্তপ্রবাহের সঙ্গেও। পৃতিবীর এই বিপর্যয় সময়ে দুনিয়াব্যাপী আবার প্রকৃতির কাছে ফিরে যাবার তাগিদ বোধ করে মানবসমাজ। ভোগের বিপরীতে পেতে চায় নিরাপদ,সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন। সেই তাগিদ থেকে পুনর্বার মানূষ ফিরে তাকায় মাটি,বৃক্ষ এবং প্রকৃতির প্রান-সম্পদের দিকে প্রকৃতির সম্পদ উদ্ধারে,সুস্থ্যতা অর্জনে প্রকৃতির সম্পদ সঠিক ব্যাবহারে এবং মানব জীবনকে প্রকৃতির অনুগামী তথা স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ পাঠকের,মানুষের কাজে আসলেই আমরা কৃতার্থ হবো। আসুন আমরা সবাই কৃত্রিমতার বন্ধন ছিন্ন করে ফিরে যাই যা কিছূ স্বাভাবিক,যা কিছূ প্রকৃতির তার কাছে। সমস্বরে বলি ফিরে চলো মাটির টানে।

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.