ক্রিকেট বদলে দেয়া প্রযুক্তি

0
(0)

সবুজ বাংলা ডেস্ক//
স্পাইডার ক্যাম
মাঠের ওপর দিয়ে বিশেষ তার টানা হয়, যেটার ওপর ভর করেই চলাচল করে এই বিশেষ ধরনের ক্যামেরা। দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটির কার্যক্রম। এই ক্যামেরার সাহায্যে ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময়ই খেলোয়াড়দের বিভিন্ন অ্যাকশন অনেক কাছ থেকে ধারণ করা যায়। শুধু যে টিভি সম্প্রচারকারীদের কাজের মানই স্পাইডার ক্যাম বৃদ্ধি করে তা কিন্তু নয়, একই সঙ্গে আম্পায়ারদের যেকোনো ঘটনা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে এই প্রযুক্তি।
স্ট্যাম্প ক্যামেরা
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট হয়ে উঠছে আরো সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশের। তাই সিদ্ধান্ত নিতে আরো সাবধান হচ্ছেন অ্যাম্পায়াররা। রান-আউট কিংবা স্ট্যাম্পিংয়ের হিসাব মেলাতে অনেক সময় ব্যাটসম্যানের পেছন থেকে শট ধরা হয়। এ জন্য ক্যামেরাটা বসানো থাকে মিডল স্ট্যাম্পে। তাতে ব্যাটসম্যানের পায়ের অবস্থান সম্পর্কে যেমন নিশ্চিত হওয়া যায়, সেই সঙ্গে ক্যামেরার নড়াচড়া দেখে বল স্টাম্পে আঘাত করার সঠিক মুহূর্তটাও বোঝা যায়।
গান (স্পিডোমিটার)
আফসোসের ব্যাপার হলেও ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গতিতে বল কে ছুড়েছেন, সে রেকর্ড জানা যাবে না কখনো। কারণ গান বা স্পিডোমিটার প্রযুক্তি আসার আগে বোলারদের বলের গতি মাপার কোনো উপায়ই ছিল না।
তবে এখন সময় বদলে গেছে। স্পিডোমিটার আসার পর সহজেই মাপা যায় বোলারদের সক্ষমতা।
বল ট্র্যাকিং (হক আই)
ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তির একটা হলো ‘হক আই’। কিছুদিন আগেও লেগ বিফোর উইকেটের (এলবিডাব্লিউ) সিদ্ধান্তের জন্য মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ব্যাটসম্যানের পায়ের সঙ্গে বলের সংযোগ কোন স্থানে হয়েছে, সেটা খালি চোখে দেখেই দিতে হতো সিদ্ধান্ত। উপায় ছিল না থার্ড আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার। তবে হক আই প্রযুক্তি আসার পর বদলে গেছে গোটা ব্যাপারটাই। বলের গতিপথ সহজেই বলে দিতে জানে এই প্রযুক্তি। আর এর ওপর নির্ভর করে বদলে গেছে ক্রিকেট আইনও। এলবিডাব্লিউয়ের ক্ষেত্রে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে এখন ব্যাটসম্যান কিংবা বোলাররা চাইতে পারেন রিভিউ। দেখে নিতে পারেন সুইং বা সিম, বাউন্স কিংবা স্পিনের কারণে বলের গতিপথের পরিবর্তন। তাতে ক্রিকেট হয়ে উঠেছে আরো নির্ভুল।
স্নিকোমিটার এবং হটস্পট
বল ব্যাট ছুঁয়ে গেছে কি না সেটা বোলিং এন্ডে দাঁড়িয়ে আম্পায়ারের পক্ষে বোঝা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যায়। ‘স্নিকোমিটার’ হলো এক ধরনের মাইক্রোফোন, যেটা সামান্য শব্দও ধারণ করে তা গ্রাফ আকারে প্রকাশ করতে সক্ষম।
বল ব্যাটে লেগেছে কি না কিংবা ইনসাইড এজ হয়ে বল আগে ব্যাটে নাকি প্যাডে লেগেছে, এলবিডাব্লিউ আইনের ক্ষেত্রে সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর তা নির্ধারণ করে দিতে পারে এই স্নিকোমিটার। কিন্তু এই প্রযুক্তি শব্দের ওপর নির্ভর করে। তাই ব্যাটসম্যানের আশপাশে বিভিন্ন ধরনের শব্দের আধিক্য থাকলে এই প্রযুক্তির সাহায্যে পাওয়া টানা শব্দের গ্রাফ থেকে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। তা ছাড়া ব্যাট-বল সংযোগের সূক্ষ্ম হিসাব শুধু শব্দের সাহায্যে নির্ণয় করা যায় না। তাই এ সমস্যারও এসেছে সমাধান। বলের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে ব্যাটের ওই স্থানে সামান্য যে তামপাত্রার পরিবর্তন হয়, সেটাও ভালোভাবেই ধরে ফেলতে আছে ‘হটস্পট’।
ওয়াগন হুইল ও পিচ ম্যাপ
এ দুই ধরনের প্রযুক্তি দিয়ে একটা দলের খেলার ধরন বিশ্লেষণ করা হয়। দেখানো হয়, একজন ব্যাটসম্যান মাঠের কোন কোন অংশ দিয়ে বল পাঠিয়ে রান করেছেন। বল ওপর দিয়ে নাকি গড়িয়ে গেছে, সেটাও দেখানো সম্ভব হয় ওয়াগন হুইলের মাধ্যমে।
অন্যদিকে পিচম্যাপের মাধ্যমে পিচের কোথায় কোথায় বল পড়েছে, সেটাও দেখা যায়। তাতে প্রতিপক্ষের বোলার সম্পর্কে একটা ধারণা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি কোথায় বল ফেললে কোন ব্যাটসম্যান কিভাবে খেলেন, সেটাও বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
লেড বেল
স্টাম্পের সঙ্গে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন তো বসেছে অনেক আগেই। তার ওপরে থাকা বেলের সঙ্গেও সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। লেড বেলের বিশেষত্ব হলো, স্থানচ্যুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর লেড বাতি জ্বলে ওঠে। বলটি কখন স্টাম্পে আঘাত করেছে, সেটা অনেক সময় স্লো মোশনেও বোঝা কষ্টকর। সেটা সহজ করতেই এই লেড বেলের ব্যবহার।
সুপার স্লো মোশন
সাধারণ স্লো মোশনের চেয়েও ধীরগতিতে ভিডিও ধারণ করা হয়। কমিয়ে আনা হয় ফ্রেম পরিবর্তনের গতি। তাই যেকোনো ঘটনা সূক্ষ্মভাবে দেখা সম্ভব। এই স্লো মোশন প্রযুক্তির সাহায্যেই বিশ্লেষণ করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা।
বল আরপিএম
কোনো স্পিনার বল ছোড়ার পর সেটা কতটা গতিতে ঘুরছে তা মাপা হয় বল আরপিএম প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাতে বোলারের সক্ষমতা আর সেটা মাটিতে পড়ার পর উইকেটের ধরন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
বোলিং মেশিন
যেকোনো গতিতে বল এলে সেটা কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে, তা অনুশীলন করতে ব্যাটসম্যানরা এই বোলিং মেশিন ব্যবহার করেন। গতিবিধি নির্দিষ্ট করে দিলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বল ছুড়তে থাকে।
ফিটনেস দেখভালের যন্ত্র
ভারতীয় ক্রিকেট দলকে এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে উচ্চ প্রযুক্তির একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে। এটি এক ধরনের পরিধেয়যোগ্য যন্ত্র, যা কিনা খেলোয়াড়ের শরীরিক নানা বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবে। এসবের মধ্যে আছে—নতুন পরিবেশের সঙ্গে খেলোয়াড়ের শরীর কতটুকু মানিয়ে নিতে পারছে, কতটুকু প্রশিক্ষণ দরকার প্রভৃতি জানাবে এটি। জিপিএস সুবিধা সংবলিত যন্ত্রটি মূলত খেলোয়াড়ের ফিটনেসের দিকে নজর রাখবে। এই যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে খেলোয়ড়দের প্রয়োজনমতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ঠিক করে দিতে পারবেন প্রশিক্ষকরা। এই যন্ত্রগুলো কেনা হয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান স্টেটস্পোর্টসের কাছ থেকে।ভারতের আগেও নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরকেও এই যন্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।(সৌজন্যে বহুল প্রচারিত দৈনিক কালের কন্ঠ)

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.