মুছলিহীনের ত্রাণ বিতরণের ১ম পর্ব সমাপ্ত

0
(0)

মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ
দল-মত নির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, মজলুম ও খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ে সদা সোচ্চার দক্ষিণ বাংলার প্রবাদ পুরুষ হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীন দলীয় রাজনীতির সাথে সংশ্রবহীন একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুছলিহীন জাতি-ধর্ম, নির্বিশেষে সকলের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে থাকে সর্বাগ্রে।
সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যুতেও মুছলিহীন ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেয়। মুছলিহীনের উদ্যোগে সারাদেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষভাবে আমীরুল মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী হুজুরের নেতৃত্বে ২০ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠিতে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মোঃ শাহ আলম সহ স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ ও দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে সোচ্চার কন্ঠে মিয়ানমার সরকারের বর্বরতার প্রতিবাদ জানায়।
শুধু প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ মিছিল করেই ক্ষান্ত না থেকে বরং আমীরুল মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী হুজুরের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে মুছলিহীন জেলা, মহানগর ও আওতাধীন সকল নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সংগ্রহ করে ২৩ সেপ্টেম্বর মুছলিহীনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মাছুম বিল্লাহ আযীযাবাদী হুজুরের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের কমিটি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে যান। সেখানে মুছলিহীন চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে সেক্রেটারী জেনারেল প্রত্যেকটি ক্যাম্পে যান এবং রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও নগদ অর্থ সাহায্য প্রদান করেন।
সেক্রেটারী জেনারেল তার ব্যবহারের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের একান্ত আপন করে নেন। রোহিঙ্গারা তাদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বর্বর ও অমানবিক নির্যাতনের কথা বর্ণনা করেন। রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের কথা শুনে সেক্রেটারী জেনারেল সহ উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রুশিক্ত হয়ে ওঠে। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেক্রেটারী জেনারেল তাদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তাদের মাঝে ত্রাণ ও নগদ অর্থ সাহায্য প্রদান করেন।
২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দিন ব্যাপী একটানা ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে সেক্রেটারী জেনারেল তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। অব্যাহত কর্মসূচীতে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সেক্রেটারী জেনারেল অসুস্থ হয়ে পড়লেও অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ত্রান বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এ সময় তিনি আলেম রোহিঙ্গাদের সাথে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করে তাদের মাঝে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য প্রদান করেন।
৬ দিন ব্যাপী কর্মসূচী সমাপনী কালীন বক্তব্যে সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, “সারা বিশ্বের শান্তির দূত মুসলমান জাতি আজ অশান্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত। অসহায়ের আশ্রয়স্থল মুসলমান জাতির আজ মাথা গোঁজার ঠাই নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া স্বত্বেও সারা দুনিয়ায় মুসলিম জাতি আজ নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে। এর মূল কারন হচ্ছে ইসলামের মূল শিক্ষা ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে দূরে সরে গিয়ে আমরা দল, মত, ছেলছেলা ও ফেরকার নামে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু রাসূল (সা.) এর ঘোষণা অনুযায়ী সমগ্র মুসলিম ভাই ভাই, মুসলমান জাতি একটি দেহের ন্যায়। যার একটি অংশ ব্যাথা পেলে অপর অংশেও ব্যাথা অনুভূত হয়। তাই আমাদের উচিত হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রবর্তিত ‘আল ইত্তেহাদ মা’য়াল ইখতেলাফ’ তথা ‘মতানৈক্যসহ ঐক্যনীতি’র আলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
মুছলিহীনের ত্রাণ বিতরণের ১ম পর্ব সমাপ্ত হলেও এ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। তাই তিনি দেশবাসীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহবান জানান। পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রমে যারা ইতোমধ্যে সাহায্য করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া ত্রাণ কর্মসূচী কার্যক্রমে নিয়োযিত শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সবশেষে দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ১ম পর্ব সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.