তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে মিঠা পানির সঙ্কট

0
(0)

মোঃ আহছান উল্লাহ //
কথায় বলে পানির আর এক নাম জীবন। এতো বড় একটা কথা বলা হয়েছে বিনা সন্দেহে। পানি ছাড়া পৃথিবীতে জীবন ধারন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ কথাতো সবার জানা। হুহু করে পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে পানির সঙ্কট হতে পাড়ে বা পানি সঙ্কট হলে কিইবা বিকল্প ব্যবস্থা করা যাবে তা হয়ত সাধারন মানুষের মনে আসে না। পৃথিবী আজ মানুষের জীবন ধারনে ব্যাবহৃত মিঠা পানির চড়ম সঙ্কটের মূখোমূখি দাড়িয়ে আছে। প্রকৃত মিঠা পানি অর্ধেক এর বেশী ব্যবহার করা হয়ে গেছে। মিঠা পানির ব্যবহার এভাবে চললে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ যে মিঠা পানি আছে তার অর্ধেক ব্যবহার হয়ে যাবে। বর্তমানে যে মিঠা পানি আছে তা ১৫০ কোটি মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌছায় না। এরপড়েও যদি মিঠা পানি ব্যবহারের এ ধাড়া চলতে থাকে বা বিকল্প ব্যবস্থাসহ সচেতনতা তৈরী না করা যায় তাহলে আগামী ২৫ সালের মধ্যে সারে ৩ শ কোটি মানুষ মিঠা পানির সঙ্কটে পড়বে। ইউ এন এরকমই তথ্য দিয়েছে।
আমাদের চারপাশে যে প্রকৃতি,যে পরিবেশ আর যে প্রতিবেশ তার মায়ায় আমরা বেড়ে উঠি। প্রকৃতির সন্তান মানুষ। নগর সভ্যতার অনিবার্জ বিকাশের সঙ্গে প্রকৃতিকে দুরে ঠেলে,আচার,আচরণ,আহার-বিহার,বসন-ব্যাসনে কৃত্রিমতাকে নির্ভর করতে শুরু করে মানব সম্প্রদায়। মানুষের খাদ্যর জোগানদাতা কৃষি আর কৃষকদের বন্দি করে ফেলেছে রাসায়নিক নামক বিষাক্ত কেমিক্যাল দানবের হাতে। প্রকৃতির নিরাপদ আশ্রয়ে মানুষ এবং প্রানী জগতের স্বাভাবিক বিকাশ মানব সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু মানুষের অতিভোগ স্পৃহা এবং অপ্রয়োজনীয় বিলাস সেই স্বাভাবিক যাত্রাকে ব্যাহত করেছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। প্রকৃতির সম্পদ প্রয়োজনীয় ব্যাবহারের বদলে লুন্ঠিত হচ্ছে ভোগ চাহিদা পুরণে। এই ভোগ চাহিদা পুরণের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে লুন্ঠনের অপপ্রায়াসে অনুষঙ্গি হয় রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশকসহ নানা উপযোগ। প্রকৃতি এসবের অত্যাচারে হয়ে পরেছে বিপর্যস্ত। মানবের আশ্রয় প্রকৃতি যখন বিপর্যস্ত হয়,তখন আশ্রিত মানুষের অবস্থাও হয়ে পরে নাজুক নাজেহাল ও বিপর্যয়কর। আৎকে উঠার মতো এরকমই আগাম খবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আর এ সঙ্কটে শুধু মানুষ নয় মিঠা পানির উপর নিভর্রশীল বিভিন্ন প্রান প্রজাতিরাও এ সঙ্কটের সম্মুখিন হবে। গাছ পালা তরুলতা প্রকৃতির পান প্রজাতি ছাড়া মানব সম্প্রদায় বাচতে পারে না । মিঠা পানির উপর নির্ভরশীল আমাদের প্রকৃতির অনেক কিছু হাড়িয়ে গেছে। বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীর অর্ধেক জলাভুমি নষ্ট হয়েছে। মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত প্রায় যাও টিকে আছে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখিন হয়ে আছে। পশু পাখি জীব-বৈচিত্র মিঠা পানির উপর যারা নির্ভরশীল তাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষয় মারাত্মক আকার ধারন করছে। এক যুগ আগে বিজ্ঞানীরা এ ব্যপারে সতর্ক বার্তা দিলেও আমরা এখনও সচেতন হতে পাড়ি নাই । পৃথিবীর অনেক দেশ আপ্রান চেষ্ঠা চালালেও আমাদের দেশে এর কোন সফল কাজ পরিলক্ষিত হয়নি আজও যাও দেখা যায় তা মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রেস রিলিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাও অপ্রতুল।
প্রিয় পাঠক পৃথবী নামক গ্রহটি পানি দিয়ে ঢাকা তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে পানির সমস্যা কেন হবে। পাঠক এ কথা যেমন ঠিক তেমনী সত্য কথাটার বাস্তবতা হলো সে পানির ৯৭ ভাগই লোনা পানি যা প্রানকুল জীববৈচিত্রের ব্যবহারের অযোগ্য।
প্রিয়ো পাঠক পানি নিয়ে হাজার হাজার বছর আগেও ধর্মীয়ভাবে নবী,রাসুল আবেদ, পন্ডিত,মনি ঋষীরাও সতর্ক বার্তা দিয়ে গেছেন । যে যুগে মিঠা পানির কোন অভাব ছিল না। আমরা সেখান থেকেও কোনও সচেতনতা অর্জন করতে পাড়ি নাই আসলেই আপসোসের বিষয়। বিভিন্ন ধর্মে পানি নিয়ে গুরত্বপূর্ন যে কথাগুলো বলা হয়েছে নিম্নে তার কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো।
** আমরা যেন পানির সংরক্ষন করি সম-বন্টন করি মানুষসহ অন্যান্য জীব ও গাছ পালার মধ্যে-(আলÑকোরান)।
** পানিই জীবন পানিই খাদ্য-(যর্জুবেদ)।
** মহা-সাগর সকল জীবের শয্যা-(অথর্ববেদ)।
** পানিতেই ঈশ্বরের বসতি বৃক্ষের সত্তা হলো পানি-(বাইবেল)।
** পানির মধ্যে আত্মার বিকাশ এ কথা যে অ¯ী^কার করে সে নিজের অস্তিত্তকেই অস্বীকার করে-(জৈনদর্শন)।
ধরতে গেলে এই যে সেদিনও পৃথিবী নামক ভূ’মন্ডলে পরিস্কার পরিছন্ন বাতাসের মতো পরিস্কার পানি বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষের কাছে ছিল সহজপ্রাপ্য। বাতাস কোনও কোনও জায়গায় বিশেষ করে শহরে দুষিত হতে শুরু করেছে তথাকথিত নগর সভ্যতার কংক্রিটের জঞ্জালের কারনে।
কিন্ত পানি ? এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব আছে চারপাশে তাকালেই তা বোঝা যায়। অথচ মানব স্বাস্থর কথা বিবেচনা করলে এই পানি বাহিত সমস্যায় পৃথিবীর এক তৃতিয়াংশ মানুষ এর অবস্থা যে ভয়াবহ এ ব্যাপারে অনেকেই একমত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এ গুলো সরাসরি পানি অথবা খাদ্যের মধ্যে দিয়ে সংক্রমন হয় অথবা পরোক্ষরোগ বহনকারি জীব যেমন মশা যা পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে। এদের দ্বাড়া উদারাময়, ডেঙ্গু-জ্বর, ম্যালেরিয়াসহ চোখের পাতার ছোয়াচে প্রদাহ বা ট্রাকোমা যে রোগটি বছরে পৃথিবীতে প্রায় ৬০ লাখ লোকের অন্ধত্বের কারন হয়। যদি সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয় তা হলে এ সংখা বেড়ে যাবে কয়েক গুন। বর্তমানে অপরিশ্রুত পানির কারনে পৃথিবীতে প্রায় ৩৩০ কোটি মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার মধ্যে ৩৩ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ পৃথিবীর ২৩০ কোটি মানুষের আওতার বাইরে চলে যাবে স্বাস্থকর নিরাপদ পানি।
ইউ এন এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর ৩০ টি দেশের মানুষ যা বিশ্ব জন সংখ্যার ২০ শতাংশ মিঠা পানির অপ্রতুলতায় ভ’গছে। ২০২৫ সাল নাগদ এর সংখ্যা বেড়ে দ্বাড়াবে বিশ্ব-জনসংখ্যার ৩০ শতাংশে ৫০ টি দেশে। বর্তমানে ২৫ মিলিয়ন পরিবেশউদ্ভাস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বর্তমান আধুনিক যুগে পরিবেশ উদ্ভাস্তর কথা বললে এটা নতুন কথা মনে হলেও এর শুরু কিন্ত ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ লক্ষাধি ওকিস সম্প্রদায় জমিজমা ঘড়বাড়ি ছেড়ে পরিবেশ উদ্ভা¯ত হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বিভিন্ন দেশে যার বেশীর ভাগই আশ্রিত হয়েছিল আমেরিকার ক্যালিফোরনিয়ায়। পরিবেশ উদ্ভাস্ত সংখ্যা দিনদিন বাড়বেই।
পরিবেশ উদ্ভাস্তর বিভিন্ন কারন উলে¬্যখ করে বিশ্ব ব্যাংকের এক সমিক্ষায় দেখা গেছে বর্তমান জিবাষ্ম জালানীর তীব্রতা ,ভ’গর্ভস্ত পানির স্তর নিঃশেষিত হয়ে যাওয়া,ক্রমবর্ধমান মরুময়তা.সমুদ্র-সমতলের উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে শুরু হবে মহা বিপর্যয় আর এ গুলো গ্রাম থেকে শুরু হয়ে শহর গুলো আক্রান্ত হবে। যার জলন্ত প্রমান ইয়েমেনের রাজধানী সানা, সানার ভূ’গর্ভস্ত পানির স্তর নেমে যাচ্ছে বছরে ৬ মিটার। এ অবস্থায় পানি নিঃশেষ হয়ে গেলে শহরবাসীদের অনেক দুর থেকে পানি আনতে হবে অথবা শহর ছেরে চলে যেতে হবে। একই ঝুকিতে আছে পাকিস্থানের বেলুচিস্থান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা,কোয়েটা শহর তৈরী হয়ে ছিল ৫০ হাজার লোকের বাসের জন্য সেখানে বর্তমানে ১০ লক্ষ লোকের বাস তাদের সুপেয় পানির জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে ২ হাজার নলকু’পের উপর। সানার মতো এখানেও পানির ভূ’গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। দুটি দেশের উদাহরন দেখানো হলো আসলে এ প্রখর সমস্যা গোটা পৃথিবীকেই গ্রাস করে ফেলছে। আর এ সমস্যার বড় ঝুকিতে রয়েছে বাংলাদেশ সমূদ্রপৃষ্টর ১ মিটার উচ্চতা বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জমি নিয়ে যাবে সমূদ্র গর্বে এতে পরিবেশ উদ্ভাস্ত হবে প্রায় ৪ কোটি মানুষ। এ ব্যাপারে আমাদের আগাম কোন প্রস্ততি আছে কি ? সমুদ্র পৃষ্ঠর নিকটবর্তী এশিয়া মহা-দেশের পাকিস্থান,চীন,ভারত,ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপাইন,দক্ষিন কোরিয়া,থাইল্যান্ড ও ভিয়েত নামও একই ঝুকির মধ্যে রয়েছে। সর্বপরি ক্রমপ্রসারিত পরিবেশীয় সমস্যা মরুময়তার জন্যই হোক আর সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতার জন্যই হোক সমস্যা কিন্ত শুরু হয়ে গেছে আগে থেকেই । সমস্যার গভীরতা ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত তবে একটা বিষয় পরিস্কার বর্তমান আধুনিক নামের সভ্যতা প্রতিনিয়ত আমাদের প্রতিবেশের ধারন-ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্চ করছে।
পৃতিবীর এই বিপর্যয় সময়ে দুনিয়াব্যাপী আবার প্রকৃতির কাছে ফিরে যাবার তাগিদ বোধ করে মানবসমাজ। ভোগের বিপরীতে পেতে চায় নিরাপদ,সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন। সেই তাগিদ থেকে পুনর্বার মানুষ ফিরে তাকায় মাটি এবং প্রকৃতির প্রান-সম্পদের দিকে। এই তাকানোতে মানুষের নজরে পড়ে মানুষ নিজেই ইতিমধ্যে প্রকৃতির বিপুল ক্ষয় ক্ষতি করে ফেলেছে। এই ক্ষয় ক্ষতি পূরনে সামগ্রীকভাবে মানুষ উদ্যোগী হয়েছে । আর এ সমস্যা কোন জাতী,গোষ্ঠী বা কোন দেশের একার সমস্যা নয় এ সমস্যা সমগ্র পৃথিবীর প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল প্রতিটা মানুষের বেচে থাকার জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্চের মোকাবিলা করতে হলে প্রাথমিকবাবে তিনটি বিষয়ের উপর গুরত্ব দিতে হবে। * জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন * *পানির সংরক্ষন,বন্টন ও সুষ্ট ব্যবহার এবং সুস্থ সচ্ছ শক্তিশালী নীতিমালা তৈরী করে দ্রুত প্রয়োগ করতে হবে যা দ্বাড়া পৃথিবীতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসরন কমাবে এবং আবহাওয়াকে দৃঢ় করবে। আহছান উল্লাহ,সভাপতি-গৌরনদী প্রেস ক্লাব ॥

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.