শাপলার পুষ্টি ও ভেষজ গুন
আহছান উল্লাহঃ বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। শাপলা খাদ্য হিসেবেও বাংলার শহর ও গ্রামগঞ্জে বহুল প্রচলিত। শাপলার ভরা মৌসুম শুরু হয় সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে। বাংলাদেশের শহর, বন্দর, গ্রামের এই সময় শাপলা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সাধারণত শাপলা লাল ও সাদা রঙের হয়ে থাকে, এছাড়া ও এদের কয়েকটি প্রজাতির রয়েছে। এর মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর লাল রঙের শাপলা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এটির পুষ্টিগুন খুব বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাত গুন বেশি।শাপলা বর্ষাকালে জন্মে ও ফুল ফোঁটে। জুন মাসের শেষের দিকে ফুল ফোঁটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়। জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। শাপলা ফুলের বংশবৃদ্ধি মূলত শিকড় থেকেই হয়ে থাকে।অপরূপ বৈচিত্রের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। বিভিন্ন ধরনের ফুলের সৌন্দর্য্য বাংলার বৈচিত্র্যময়তাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন রকম ফুলের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের স্বীকৃতি নিয়ে ‘শাপলা’ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, শ্রীলংকার জাতীয় ফুলও এই শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে নীল-মাহানেল বলে ডাকা হয়। ইংরেজিতে শাপলা বলা হয় Water lily যার বৈজ্ঞানিক নাম Nymphea nouchali.
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা হলেও অযত্ন আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে নয়নাভিরাম এই ফুল। আবহাওয়ার দিক থেকে সাদা, লাল, বেগুনি, হলুদ ও নীল এই পাঁচ রঙের শাপলা আমদের দেশে জন্মে।
গবেষকদের মতে, শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি-প্রটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। আবার শাপলার ফল দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ ভাজা যায়। গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ বলে এটি পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়- পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন এই শালুক তুলে খাওয়া যায়। খেতেও সুস্বাদু। তবে আমাশয়ের জন্য খুবই উপকারী বলে জানালেন ভেষজ গবেষকরা ।