সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সুচির অবস্থান ন্যাক্কারজনক

0
(0)

এস এম রহামান হান্নান, স্টাফ রিপোর্টার

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে অং সান সুচির অবস্থান ন্যাক্কারজনক হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। তিনি নিজেকে বিতর্কিত করছেন প্রতিনিয়ত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি সঠিক অবস্থান নিতে পারেননি বলে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচিত হয়েছেন। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি ভয়ঙ্করভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপ সুচির এ অবস্থানের জন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল হক মানবকণ্ঠকে বলেন, অং সান সুচি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। সেই হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ইতিবাচক ভূমিকা থাকা উচিত ছিল। সুচির যে অবস্থান নেয়ার কথা ছিল তিনি তা নেননি। নোবেল বিজয়ী সুচি এবং আজকের সুচির আচরণের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। রোহিঙ্গাদের যে মানবিক ও আইনগত অধিকার রয়েছে সে অধিকার তার মেনে নেয়া উচিত ছিল। তিনি যে অবস্থান গ্রহণ করেছেন সেটি মানবাধিকারের কাছে প্রলঙ্গিত হয়েছে। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে হতাশ করেছেন।
সুচির সঠিক অবস্থান নিতে না পারার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুচি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতার অনুশীলন করছেন। মিয়ানমারের রাজনীতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে সামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনীর একটি অংশের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের শুধু জাতিগতভাবে অস্বীকার নয় তাদের একেবারে নির্মূল কারার পরিকল্পনা করে আসছে। যেহেতু সুচি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন, তাই তিনি এই বিষয় থেকে একেবারে বের হতে পারছেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, অং সান সুচির কাছে সবার প্রত্যাশা ছিল মিয়ানমারের ভেতরে যে জাতিগত বিষয়গুলো আছে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের প্রতি যে ধরনের বৈষম্যমূলক ও নির্যাতনমূলক ইস্যুগুলো ঘটে আসছিল এগুলো পরিবর্তন করবেন এবং তাদের নাগরিত্ব আইন তা বাতিল করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আরো ভয়াবহভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গা এবং আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে, সুচির এ অবস্থানটা অত্যন্ত ন্যাক্যারজনক এবং ঘৃণ্যতম। রাজনীতি করলেও সে রাজনীতির একটা পরিসীমা আছে। যে দেশে শত শত বছর ধরে একটি কমিউনিটি বাস করে সেই কমিউনিটিকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কথা কোনো দেশের রাজনীতিই বলে না। সেটা তো আমরা তার কাছ থেকে আশা করিনি। আমরা চেয়েছিলাম তার দেশের জাতিগত যে বিরোধগুলো আছে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের যে অধিকারের প্রশ্ন রয়েছে তাদের সেই অধিকারগুলো আস্তে আস্তে ফিরিয়ে দেবেন।
তিনি বলেন, সুচি সঠিক অবস্থান নিতে পারছেন না, কারণ তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে এবং সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। নিজের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক অভিলাষ সৃষ্টি হয়েছে যে, তার দলকে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করা। এ মুহূর্তে তিনি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিবাধে যেতে চান না। তাছাড়া তার ভেতরে এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা কাজ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান বলেন, মিয়ানমারের যে নিজস্ব রাজনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে সেই বাস্তবতায় অং সান সুচির কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিশেষ করে ময়িানমারের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সমাজে মুসলিমবিরোধী মনোভাব মারাত্মকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। সেখানে কিছু মুসলিমবিরোধী আন্দোলন রয়েছে। এসব আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা আছে তারা রোহিঙ্গাদের এমনভাবে উপস্থাপন করছে যে রোহিঙ্গারা এখন সামাজিকভাবে সুচির শত্রুতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার জন্য যেটুকু গণতন্ত্র হয়েছে সেখানে প্রতিরাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে সুচি শান্তি চুক্তিটাও নিতে চাইছেন না। যার ফলে সে আর্মির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে এন্টি মুসলিম নীতি ধারণ করেছে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.